Pages

জুন মাসের প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন : বাচ্চাদের বিভিন্ন অসুখের জন্য ঔষধ ব্যবহার না করে তেল, পানি, মিছরী ইত্যাদি কারো নিকট থেকে পড়ে নিয়ে ব্যবহারে বাধা আছে কি ?
ফারূক,
উত্তর : এতে কোন দোষ নেই (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৩৯৭৫, সনদ ছহীহ)। তবে অবশ্যই তা শিরক মুক্ত হতে হবে (মুসলিম হা/২২০০; মিশকাত হা/৪৫৩০)। অতএব নষ্ট আক্বীদার লোকদের কাছ থেকে ঝাড়ফুঁক নেওয়া থেকে দুরে থাকতে হবে।

প্রশ্ন  : হাত থেকে কুরআন পড়ে গেলে করণীয় কি? 

-মারিয়াম,
উত্তর : উক্ত অবস্থায় অনুতপ্ত হয়ে ‘ইন্নালিল্লা-হি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেঊন’ পড়া যায় (বাক্বারাহ ১৫৬)। সেই সাথে সতর্ক থাকতে হবে যেন এমনটি পুনরায় আর না ঘটে। উল্লেখ্য যে, পড়ে গেলে তুলে চুমো দেওয়া বা চাল বিতরণ করা ভিত্তিহীন প্রথা মাত্র।

প্রশ্ন  : চিকিৎসা হিসাবে তাবীয ব্যবহার করা যাবে কি? যদি এটা শিরক হয়, তবে অন্যান্য চিকিৎসা গ্রহণ করাও কি শিরক হবে?

-নূর আলম,

উত্তর : তাবীয কোন ঔষধ নয়। বরং তা রোগমুক্তির জন্য গৃহীত অসীলা মাত্র। মানুষ যখন তাবীয নেয়, তখন সে তার উপরেই ভরসা করে। ফলে এই বিশ্বাসটি শিরকে পরিণত হয়। অতএব আক্বীদাগত কারণে তাবীয ব্যবহার করা শিরক। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তাবীয লটকালো সে শিরক করল’ (আহমাদ হা/১৬৯৬৯; ছহীহাহ হা/৪৯২)। অন্যদিকে ঔষধ বা প্রতিষেধক সরাসরি রোগের চিকিৎসা। যা আল্লাহর হুকুমে কার্যকর হয়। সুতরাং এগুলি তাবীয বা পীরের কবরে মানত ইত্যাদির ন্যায় কোন শিরকী অসীলা নয়। অতএব ঔষধ ব্যবহারে কোন বাধা নেই। একদা ছাহাবীগণ রোগের জন্য ঔষধ সেবন করতে চাইলে তিনি অনুমতি দিয়ে বলেন, তোমরা ঔষধ সেবন কর, নিশ্চয় মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের ঔষধ আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন (আহমাদ, মিশকাত হা/৪৫৩২)। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক রোগের ঔষধ রয়েছে। যখন সেটা পৌঁছে যায়, তখন সে রোগমুক্ত হয় আল্লাহর হুকুমে (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৫১৫)। অতএব আল্লাহর উপরে পূর্ণ তাওয়াক্কুল সহ ঔষধ সেবন করবে। এর বেশী কিছু নয়।

প্রশ্ন : সুলতান নূরুদ্দীন যঙ্গী কর্তৃক রাসূল (ছাঃ) কর্তৃক স্বপ্নে আহূত হওয়া এবং তাঁর লাশ চুরির দায়ে অভিযুক্ত দু’জন ইহূদীকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করার যে কাহিনী প্রচলিত আছে, তার সত্যতা রয়েছে কি?

-আব্দুল হালীম,

উত্তর: এগুলির ঐতিহাসিক সত্যতা নিয়ে ব্যাপক সন্দেহ রয়েছে। মুহাক্কিক ইবরাহীম যায়বাক্ব বলেন, ইলমী নীতিমালা অনুযায়ী এ ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায় না। ঘটনাটি সর্বপ্রথম মসজিদুল হারামের মুওয়াযযিন মুহাম্মাদ বিন আহমাদ আল মাতরী স্বীয় ‘আত-তা‘রীফ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন, যিনি ৭৪১ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। আর নূরুদ্দীন যঙ্গীর মৃত্যু হয়েছে ৫৬৯ হিজরীতে। ফলে তাদের উভয়ের মাঝে ব্যবধান ১৭২ বছর। আর ঘটনাটির সনদও অপরিচিত রাবী দ্বারা পূর্ণ। ফলে মাতারীও ঘটনাটি সত্যতার ব্যাপারে দৃঢ়তা প্রকাশ করেননি এবং পরবর্তী নকলকারীগণ স্ব স্ব গ্রন্থসমূহে সনদবিহীনভাবেই ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন। উপরন্তু ঘটনাটি বাদশাহ নূরুদ্দীন যঙ্গীর সমসাময়িক ইবনু আসাকির, ইবনুল আছীর, ইবনু মুনকিয, ইমাদ ইস্ফাহানী প্রমুখ বিখ্যাত ঐতিহাসিকগণের কেউ-ই আলোচনা করেননি। এমনকি তাঁর জীবনী বিষয়ে সূক্ষ্ম অনুসন্ধানকারী ইবনুল আছীর ও আবু শামা-র মত বিদ্বানগণ তাদের ব্যাপক আগ্রহ ও সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এরূপ ঘটনার সন্ধান পাননি। হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) ‘আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ’ গ্রন্থে নূরুদ্দীন যঙ্গীর বিস্তারিত জীবনী লিখলেও এ সম্পর্কে কিছু লিখেননি। মাতারী উল্লেখ করেন যে, এ ঘটনা ৫৫৭ হিজরী সালে সংঘঠিত হয়। অথচ একজন ব্যতীত কোন ঐতিহাসিকই ৫৫৭ হিজরীতে তাঁর মদীনায় যাওয়া তো দূরের কথা, কখনো হজ্জে গিয়েছিলেন বলেও উল্লেখ করেননি। কারণ খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে জিহাদের ব্যস্ততাতেই তার সারাটা জীবন কেটেছিল।

বিস্তারিত আলোচনা শেষে সম্মানিত মুহাক্কিক বলেন, এই কাহিনী ছড়িয়ে পড়ার কারণ কি? সে বিষয়ে আমি বলতে চাই যে, নূরুদ্দীন যঙ্গী মদীনার চতুস্পার্শ্বকে মযবুত দেওয়াল দিয়ে ঘিরে দিতে চেয়েছিলেন এবং সেখানে নিজের নাম খোদাই করতে চেয়েছিলেন (যা তিনি পারেননি)। পরে ৫৭৮ হিজরীতে ক্রুসেডাররা মদীনা দখল করে রাসূল (ছাঃ)-এর লাশ উঠিয়ে ফিলিস্তীনে নিয়ে যেতে চেয়েছিল (যেটা তারাও পারেনি)। বিষয়টি ইবনু জুবায়ের স্বীয় রিহলাহ-এর মধ্যে এবং মাকরেযী স্বীয় খুত্বাত্ব-এর মধ্যে বর্ণনা করেছেন। পরে দু’টি কাহিনী মিশ্রিত হয়ে একটি কাহিনীতে পরিণত হয়েছে। আল্লাহ সর্বাধিক অবগত’ (দ্রঃ ড. আলী মুহাম্মাদ ছাল্লাবী, আল-কাএদুল মুজাহিদ নূরুদ্দীন মাহমূদ যঙ্গী, পৃঃ ২৬০-২৬১)। এছাড়া এ ঘটনার মধ্যে পুড়িয়ে হত্যা করার কথা বিবৃত হয়েছে, যা শরী‘আত বিরোধী। অতএব ঘটনাটি বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকা কর্তব্য।

প্রশ্ন  : মানুষের উপর জিন জাতির বিভিন্ন অলৌকিক কর্মকান্ড যেমন উড়িয়ে নেওয়া, তার উপর আছর করা ইত্যাদি যেসব বিষয় সমাজে প্রচলিত রয়েছে, এগুলির সত্যতা কতটুকু?

-পারভেয,

উত্তর : জিনদের এসব কর্মকান্ডের সত্যতা রয়েছে। যেমন জনৈক জিন সুলায়মান (আঃ)-এর নির্দেশে সাবা-র রাণী বিলক্বীসের সিংহাসন চোখের পলকে তাঁর দরবারে এনে হাযির করেছিল (নামল ২৭/৩৯-৪২)। রাসূল (ছাঃ) এক শিশুর মধ্য থেকে জিনকে বেরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, ‘বেরিয়ে যা হে আল্লাহর দুশমন! আমি আল্লাহর রাসূল’। অতঃপর সে বেরিয়ে যায়। শিশুটি সাত বছর যাবৎ প্রতিদিন দু’বার করে জিন দ্বারা আক্রান্ত হ’ত (হাকেম হা/৪২৩২; ছহীহাহ হা/৪৮৫)। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, ‘আমরা সবাই মক্কার বাইরে রাত্রিকালে রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে ছিলাম। কিন্তু এক সময় তিনি হারিয়ে গেলেন। আমরা ভয় পেলাম তাঁকে জিনে উড়িয়ে নিয়ে গেল, নাকি কেউ অপহরণ করল। আমরা চারদিকে খুঁজতে থাকলাম। কিন্তু না পেয়ে গভীর দুশ্চিন্তায় রাত কাটালাম। ...সকালে তাঁকে আমরা হেরা পাহাড়ের দিক থেকে আসতে দেখলাম। অতঃপর তিনি আমাদের বললেন, জিনদের একজন প্রতিনিধি আমাকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। আমি গিয়ে তাদেরকে কুরআন শুনালাম’। ... (মুসলিম হা/৪৫০)। অতএব এগুলি অবিশ্বাস করার কোন কারণ নেই।

জিনের প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সূরা ফালাক্ব ও নাস পাঠ করাই যথেষ্ট। এছাড়া সূরা ফাতিহা, সূরা কাফেরূন, সূরা ইখলাছ, আয়াতুল কুরসী ইত্যাদি পাঠ করা যায়।

প্রশ্ন : মেহেদী পাতা ব্যতীত চুল-দাড়িতে লাল কলপ বা বগলী ব্যবহার করায় শরী‘আতে কোন বাধা আছে কি?

-নাজমুল হক

উত্তর : চুল ও দাড়ি সাদা হয়ে গেলে মেহেদী বা অন্য কোন রং দিয়ে তা পরিবর্তন করা যাবে। তবে কালো রং ব্যবহার করা নিষিদ্ধ (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৪২৪)। রাসূল (ছাঃ) বলেন, শেষ যামানায় কিছু লোকের আবির্ভাব ঘটবে, যারা কবুতরের বুকের পশমের ন্যায় কালো কলপ দিয়ে চুল-দাড়ি কালো করবে। এরা জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না’ (আবুদাঊদ হা/৪২১২; নাসাঈ, মিশকাত হা/৪৪৫২)। এজন্য উত্তম রং হ’ল মেহেদী (আবুদাঊদ হা/৪২০৫, মিশকাত হা/৪৪৫১)। উল্লেখ্য, স্ত্রীকে সন্তুষ্ট করা এবং শত্রুর হৃদয়ে ভীতি সঞ্চার করার জন্য কালো খেযাব ব্যবহার করা সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছটি ‘মুনকার’ বা ‘যঈফ’ (ইবনু মাজাহ হা/৩৬২৫; সিলসিলা যঈফাহ হা/২৯৭২)।

প্রশ্ন  : পুরাতন গোরস্থান কবরে ভরে গেছে। এক্ষণে সেখানে নতুনভাবে কবর দেওয়ার জন্য করণীয় কি?

-আব্দুল্লাহ,

উত্তর : কবরস্থান ভরে গেলে এবং প্রশস্ত করা সম্ভব না হলে, এমতাবস্থায় পুরাতন কবরগুলোর লাশ মাটির সাথে মিশে গেছে বলে অভিজ্ঞ ব্যক্তিগণ একমত হলে সেখানে নতুনভাবে কবর দেওয়ায় কোন বাধা নেই। কবর খুঁড়তে গিয়ে যদি প্রথম দিকেই মৃত ব্যক্তির হাড়-হাড্ডি পাওয়া যায়, তাহ’লে কবর খনন বন্ধ করবে। কিন্তু যদি শেষের দিকে পাওয়া যায়, তবে হাড়টিকে কবরের একপাশে রেখেই সেখানে নতুন লাশের কবর দিবে। কেননা এক কবরে একাধিক লাশ দাফন করা জায়েয আছে (ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৩০১)। মদীনার বাক্বী‘উল গারক্বাদ এবং মক্কার আল-মু‘আল্লা কবরস্থানে এ নিয়মই পালিত হয়ে আসছে (ফাতাওয়া ওয়া ইসতিশারাতুল ইসলাম ১৫/২০১)।

প্রশ্ন : দাজ্জাল আসবে ক্বিয়ামতের পূর্বে। কিন্তু রাসূল (ছাঃ) কর্তৃক দাজ্জালের ফেৎনা থেকে পানাহ চাওয়ার কারণ কি ছিল?

-এনামুল হক

উত্তর : রাসূল (ছাঃ) নিজে সর্বদা দাজ্জালের ফিৎনা থেকে পানাহ চেয়েছেন। তিনি স্বীয় উম্মতকে এ ব্যাপারে সতর্ক করেছেন এবং তার অনিষ্ট থেকে পানাহ চাওয়ার দো‘আ শিখিয়েছেন (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/২৪৫৯)। কেবল আমাদের নবীই নন বরং সকল নবীই স্ব স্ব উম্মতকে দাজ্জালের ব্যাপারে সাবধান করে গেছেন (আবুদাউদ হা/৪৩১৬)। কারণ দাজ্জাল ক্বিয়ামতের পূর্বে আসলেও ক্বিয়ামত কখন ঘটবে সে ব্যাপারে কারো জানা নেই। আল্লাহ বলেন, ‘ক্বিয়ামত সন্নিকটে’ (ক্বামার ৫৪/১)। তিনি বলেন, তারা একে দূরে মনে করে। অথচ আমরা একে নিকটে মনে করি’ (মা‘আরেজ ৭০/৬-৭)। রাসূল (ছাঃ) ক্বিয়ামতের ব্যাপারে সর্বদা ভীত থাকতেন বলেই দাজ্জালের ফেৎনা থেকে পানাহ চাইতেন। যেমন একদা সূর্যগ্রহণ শুরু হলে তিনি ক্বিয়ামত শুরু হয়েছে মনে করে ভীত হয়ে দাঁড়িয়ে যান (বুখারী হা/১০৫৯)। সুতরাং আমাদেরকেও সদা সর্বদা দাজ্জালের ফেৎনা থেকে পানাহ চাইতে হবে এবং ক্বিয়ামতের সেই ভয়াবহ দিবস আসন্ন বিবেচনা করে প্রস্ত্ততি গ্রহণ করতে হবে।

প্রশ্ন : ‘বালাগাল ‘উলা বি কামালিহী’ দো‘আটি পাঠ করা যাবে কি?

-আবুল হোসেন,

উত্তর : এটি কোন দো‘আ নয়, বরং কবিতা। বাক্যটি পারস্য কবি শেখ সা‘দী (৫৮৫ অথবা ৬০৬-৬৯১ হিঃ) স্বীয় গুলিস্তাঁ গ্রন্থে আরবীতে লিখিত তার অল্প সংখ্যক কবিতা সমূহের মধ্যে রাসূল (ছাঃ)-এর প্রশংসায় লিখিত কবিতার একটি অংশ। এটি দরূদ হিসাবে পাঠ করা যাবে না। কারণ এটি একটি কবিতা মাত্র। দ্বিতীয়তঃ এটি শিরক মিশ্রিত। এখানে বলা হয়েছে, ‘উচ্চতা তার পূর্ণতায় পৌঁছে গেছে’। অথচ এটি কেবল আল্লাহর জন্য খাছ। তৃতীয়তঃ এখানে রাসূল (ছাঃ)-কে নূরের তৈরী কল্পনা করা হয়েছে। যাঁর দেহের আলোকচ্ছটায় অন্ধকার বিদূরিত হয়েছে। এটি কুরআন বিরোধী আক্বীদা (কাহফ ১৮/১১০)। সুতরাং এটি পাঠ করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। উল্লেখ্য যে, স্বয়ং কবিও এটিকে দরূদ বলেননি। বরং শেষে বলেছেন, صَلُّوا عَلَيْهِ وَآلِهِ ‘তোমরা তাঁর ও তাঁর পরিবারের প্রতি দরূদ পাঠ কর’।

প্রশ্ন : মসজিদের জন্য জমি ওয়াকফ করার পর কমিটির কোন সদস্যের সাথে মনোমালিন্যের কারণে জমিদাতা তাকে বলেন যে, আপনি এ মসজিদে ছালাত আদায় থেকে বিরত না থাকলে কিয়ামত পর্যন্ত এর উপর আমার দাবী থাকবে। এক্ষণে ওয়াকফকারী কি এরূপ বলার অধিকার রাখেন? এতে কি ওয়াকফের কোন ক্ষতি হয়? উক্ত মুছল্লী এই মসজিদে ছালাত আদায় করতে পারবে কি?

-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

উত্তর : কোন ব্যক্তি কিছু ওয়াকফ করে তা পুনরায় দাবী করতে পারে না। কেননা ওয়াকফকৃত বস্ত্ত তার থাকে না। সুতরাং এরূপ দাবী করা সম্পদ ফিরিয়ে নেওয়ার শামিল। যাকে বমি করে পুনরায় খাওয়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে (বুখারী হা/১৪৯০, মুসলিম হা/১৬২২, মিশকাত হা/১৯৫৪)। আর কোন মুসলিম অপর মুসলিমকে মসজিদে ছালাত আদায় থেকে বাধা দেওয়ার অধিকার রাখে না। মসজিদে ছালাত আদায় করতে নিষেধ করা বড় গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ বলেন, ‘তার চাইতে বড় যালেম আর কে আছে যে আল্লাহর মসজিদ সমূহে তাঁর নাম উচ্চারণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলিকে বিরান করার চেষ্টা চালায়? (বাক্বারাহ ২/১১৪)। এক্ষণে উক্ত জমির ওয়াকফকারী হিসাবে নিজের বড়ত্ব যাহির করে এরূপ কাজ করলে তাকে তওবা করতে হবে। নতুবা ওয়াকফের নেকী থেকে তিনি বঞ্চিত হবেন।

প্রশ্ন : বিদায়কালে ‘আল্লাহ হাফেয’ বলে দো‘আ করা যাবে কি?

-আবুল বাশার, কাঞ্চন
উত্তর : উক্ত বক্তব্যটি রাসূল (ছাঃ) বা ছাহাবায়ে কেরামের আমল থেকে প্রমাণিত নয়। তবে উক্ত মর্মে দো‘আ হিসাবে হাদীছ পাওয়া যায়। যেমন জনৈক ছাহাবী সফরকালে রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে বিদায় চাইলে তিনি তার হাত ধরে বলেন, ‘ফী হিফযিল্লাহ ওয়া ফী কানাফিল্লাহ’... (আল্লাহর হেফাযতে ও তাঁর রহমতের ছায়া তলে...) (দারেমী হা/২৬৭১, সনদ জাইয়িদ, তাহকীক : সালীম আসাদ)। বিদায়কালে এর চাইতে বিশুদ্ধ ও সুন্দর দো‘আ সমূহ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। যেমন আসতাওদি‘উল্লা-হা দীনাকুম ওয়া আমা-নাতাকুম ওয়া খাওয়া-তীমা আ‘মা-লিকুম’ (আমি আপনার বা আপনাদের দ্বীন, ও আমানত সমূহ এবং শেষ আমল সমূহকে আল্লাহর হেফাযতে ন্যস্ত করলাম’) (তিরমিযী, আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৪৩৫)।

উল্লেখ্য যে, ফী আমা-নিল্লা-হ বলে বিদায় দেওয়ার প্রচলিত প্রথার কোন ভিত্তি নেই। এছাড়া অনেকে ‘ভাল থাকুন’ ‘সুস্থ থাকুন’ ইত্যাদি বলেন। এরূপ বলা যাবে না। বরং ‘আল্লাহ আপনাকে ভাল রাখুন’ ‘সুস্থ রাখুন’ বলা যাবে। কারণ মানুষ নিজে নিজে ভাল থাকতে পারে না আল্লাহর রহমত ব্যতীত।

প্রশ্ন : সালাম প্রদানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন কি কি বাক্য ব্যবহার করা যায়?

-ইবরাহীম, সিংড়া

উত্তর : সালাম প্রদানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ‘আসসালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু’ এবং সর্বনিম্ন ‘আসসালামু ‘আলাইকুম’ বলবে। সর্বোচ্চটি বললে ত্রিশ নেকী এবং সর্বনিম্নটি বললে দশ নেকী হবে (আবুদাঊদ হা/৫১৯৫; তিরমিযী হা/২৬৮৯)। আর সালাম প্রদানের সময় ‘ওয়া মাগফিরাতুহু’ যোগ করা সম্পর্কিত হাদীছটি যঈফ হ’লেও (আবুদাউদ হা/৫১৯৬; মিশকাত হা/৪৬৪৫) উত্তর প্রদানের সময় যোগ করার হাদীছটি ‘হাসান’ (বুখারী, তারীখুল কাবীর ১/৩৩০; সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৪৪৯)।

প্রশ্ন  : জিহাদ ও ক্বিতালের মধ্যে পার্থক্য কি?

-শহীদুল্লাহ

উত্তর : ইসলামী পরিভাষায় ‘জিহাদ’ অর্থ- আল্লাহর পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো’ এবং ‘ক্বিতাল’ অর্থ- আল্লাহর পথে কুফরী শক্তির বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করা’। দু’টি শব্দ অনেক সময় একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। তবে ক্বিতাল শব্দটি নির্দিষ্ট অর্থবোধক এবং জিহাদ ব্যাপক অর্থবোধক। অর্থগত ব্যাপকতার কারণে কখনো পিতা-মাতার খেদমত করাকে অন্যতম জিহাদ বলা হয়েছে, কখনো কুপ্রবৃত্তি ও শয়তানের কুমন্ত্রণার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করাকে জিহাদ বলা হয়েছে। অনুরূপ শাসকের নিকট হক কথা বলাকে সর্বোত্তম জিহাদ বলা হয়েছে (আনকাবূত ৬; বুখারী হা/৫৯৭২, ৬৪৯৪; তিরমিযী, হা/১৬৭১; মিশকাত হা/৩৭০৫)।

বাতিলের বিরুদ্ধে জিহাদ সর্বাবস্থায় ফরয। তবে সেটি স্থান-কাল-পাত্র ভেদে কখনো নিরস্ত্র হবে, কখনো সশস্ত্র হবে। নিরস্ত্র জিহাদ মূলতঃ প্রজ্ঞাপূর্ণ দাওয়াত ও হক-এর উপরে দৃঢ় থাকার মাধ্যমে হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে ক্বিতালের জন্য অনুকূল পরিবেশ, পর্যাপ্ত সামর্থ্য, বৈধ কর্তৃপক্ষ এবং আল্লাহর পথে নির্দেশ দানকারী আমীরের প্রয়োজন হবে। নইলে ছবর করতে হবে এবং সম্ভবপর আমর বিল মা‘রূফ ও নাহি ‘আনিল মুনকারের মৌলিক দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে।

শান্তিপূর্ণ অবস্থায় কুরআন, হাদীছ, বিজ্ঞান, যুক্তি-প্রমাণ ও প্রজ্ঞাপূর্ণ পন্থায় ইসলামকে অন্যান্য দ্বীনের উপরে বিজয়ী করার সংগ্রামকে বলা হবে ‘জিহাদ’। যাকে এযুগে ‘চিন্তার যুদ্ধ’ (الْغَزْوُ الْفِكْرِيُّ) বলা হয়। এই জিহাদে দৃঢ় ও আপোষহীন থাকা এবং জান-মাল ব্যয় করা নিঃসন্দেহে জান্নাত লাভের উত্তম অসীলা হবে।

প্রশ্ন : প্রবাসী স্বামীর দেশে থাকা স্ত্রীর সাথে তার শ্বশুরের অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠলে বিষয়টি হাতেনাতে ধরা পড়ে। তখন পিতা ছেলের নিকটে ক্ষমা চাইলেও পরবর্তীতে একই সমস্যা একাধিক বার দেখা দেওয়ায় এক্ষণে উক্ত স্বামীর জন্য করণীয় কি?

-নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

উত্তর : বর্ণনা অনুযায়ী নিশ্চিতভাবে বুঝা যায়, উভয়ের সম্মতিতে এ কাজ হচ্ছে। এক্ষেত্রে ইসলামের বিধান হ’ল উভয়কে পাথর মেরে হত্যা করা। এক্ষণে রাষ্ট্রে ইসলামী আইন জারি না থাকায় তা সম্ভব নয়। অতএব এক্ষেত্রে স্ত্রীকে তালাক দিতে হবে। নইলে স্বামী ‘দাইয়ূছ’ হিসাবে গণ্য হবে। যার জন্য জান্নাতকে হারাম করা হয়েছে (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩২/১৪১)।

প্রশ্ন : নিয়োগ পরীক্ষায় ১ম হওয়া সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য অনুদান না দিলে চাকুরী হবে না। এক্ষেত্রে আমার করণীয় কি?

-রফীকুল ফাহদ

উত্তর : অন্যের হক নষ্ট করে নিজে তা নেওয়ার জন্য ঘুষ দিলে সেটা হবে মহাপাপ। সেক্ষেত্রে ঘুষ দাতা এবং ঘুষ গ্রহীতা উভয়েই কঠিন গুনাহের ভাগিদার হবে। রাসূল (ছাঃ) ঘুষদাতা ও ঘুষগ্রহীতার উপর লা‘নত করেছেন (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৩৭৫৩)।

পক্ষান্তরে মযলূম ব্যক্তি যুলুম প্রতিরোধের জন্য বাধ্যগত অবস্থায় এটা করলে, সেটা তার জন্য ‘মুবাহ’ হবে। কিন্তু ঘুষ গ্রহীতার জন্য তা হারাম হবে। এক্ষেত্রে ঘুষগ্রহীতাই পাপের বোঝা বহন করবে। ইবনু হাযম (রহঃ) বলেন, যাকে তার হক থেকে বঞ্চিত করা হয়, তার জন্য যুলুম প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে অর্থ প্রদান করা ‘মুবাহ’। তবে এক্ষেত্রে গ্রহণকারী হবে মহাপাপী (মুহাল্লা ৮/১১৮ মাসআলা নং ১৬৩৮)। ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, গ্রহণকারীর জন্য এটি হারাম এবং দাতার জন্য যুলুম প্রতিরোধের স্বার্থে জায়েয’ (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩১/২৮৬)। তবে যতদূর সম্ভব এ ব্যতীত অন্য কোন বৈধ উপায় অবলম্বন করা তাক্বওয়াশীল মুমিনের জন্য কর্তব্য। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সাধ্যমত আল্লাহকে ভয় কর’ (তাগাবুন ৬৪/১৬)।

উল্লেখ্য যে, চাকুরীর লোভ দেখিয়ে প্রার্থীর নিকট থেকে প্রতিষ্ঠানের জন্য ‘ডোনেশন’ আদায় করা ঘুষ আদায় করার শামিল। তাছাড়া বর্তমানে নিয়োগ পরীক্ষায় ১ম হওয়া না হওয়া আর্থিক লেনদেন বা প্রভাবশালীদের চাপ সৃষ্টির উপরে অনেকটাই নির্ভরশীল। অতএব উভয় পক্ষকে সাধ্যমত তাক্বওয়া অবলম্বন করা আবশ্যক।

প্রশ্ন : বিভিন্ন বিদ‘আতী দিবস উপলক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় সেগুলিতে অংশগ্রহণ করা যাবে কি?

-রায়হান, খয়রাবাদ

উত্তরঃ বিদ‘আতী দিবস উপলক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ অন্যান্য যেকোন প্রতিষ্ঠানে আয়োজিত অনুষ্ঠান থেকে দূরে থাকতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা পাপ ও সীমালংঘনের কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করো না’ (মায়েদা ৫/২)।

প্রশ্ন : সূরা তওবা ৩১ আয়াতের ব্যাখ্যা জানতে চাই।

-আব্দুল্লাহ

উত্তর : উক্ত আয়াতের অর্থ হ’ল- ‘তারা আল্লাহকে ছেড়ে নিজেদের আলেম-ওলামা ও পোপ-পাদ্রীদের এবং মারিয়াম পুত্র মসীহ ঈসাকে ‘রব’ হিসাবে গ্রহণ করেছে। অথচ তাদের প্রতি কেবল এই আদেশ করা হয়েছিল যে, তারা শুধুমাত্র এক উপাস্যের ইবাদত করবে। তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। আর তারা যাদেরকে শরীক সাব্যস্ত করে, তিনি সে সব থেকে পবিত্র’ (তওবা ৯/৩১)।

খ্রিষ্টান ধর্মনেতা ‘আদী ইবনু হাতেম যখন ইসলাম কবুল করার জন্য রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে আসেন, তখন তিনি তার গলায় ঝুলানো স্বর্ণের বা রৌপ্য নির্মিত ক্রুসটি ফেলে দিতে বললেন। অতঃপর উক্ত আয়াতটি পাঠ করলেন। তখন ‘আদী বললেন, ‘আমরা তো তাদের ইবাদত করি না’। জবাবে রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘তারা কি সেই সব বস্ত্ত হারাম করে না যা আল্লাহ হালাল করেছেন, অতঃপর তোমরাও তা হারাম কর? আর তারা কি ঐসব বস্ত্ত হালাল করে না যা আল্লাহ হারাম করেছেন। অতঃপর তোমরাও তা হালাল কর? আদী বললেন, হ্যাঁ। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, এটাই তো ওদের ইবাদত হ’ল (তিরমিযী হা/৩০৯৫, ছহীহাহ হা/৩২৯৩)। আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, ‘তারা তাদেরকে সিজদা করার আদেশ দিত না। বরং তাদেরকে আল্লাহর অবাধ্যতার আদেশ দিত এবং তারা তাদের সে আদেশ পালন করত। সেকারণে আল্লাহ তাদেরকে ‘রব’ হিসাবে অভিহিত করেছেন’ (তাফসীর ত্বাবারী হা/১৬৬৪১)।

প্রশ্ন : ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী কে ছিলেন? জনৈক বক্তা বলেন, ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) তাকে কাফের ঘোষণা করেছিলেন। এ কথার সত্যতা আছে কি?

-ফরহাদ

উত্তরঃ ইমাম আবু আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনু ওমর ফখরুদ্দীন রাযী (রহঃ) ৫৪৪ হিজরী সনে ইরানের রায় শহরে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৬০৬ হিজরী সনে আফগানিস্তানে মারা যান। তিনি আশ‘আরী আক্বীদায় বিশ্বাসী একজন উঁচুদরের আলেম, মুফাসসির ও দার্শনিক ছিলেন। তিনি বিখ্যাত তাফসীর ‘তাফসীরে কাবীর’-এর প্রণেতা। তবে তাঁর রচিত ‘আস-সিররুল মাকতূম ফিস সিহরে ওয়া মুখাতাবাতুন-নুজূম’ নামক গ্রন্থে তিনি নক্ষত্র ও মূর্তিপূজাকে সমর্থন করে বই লিখেন। এর পক্ষে প্রমাণ সমূহ উপস্থাপন করেন। সেকারণ ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রাঃ) বলেন, ‘এটি মুসলিম উম্মাহর ঐক্য মতে ইসলাম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার শামিল (وَهَذِهِ رِدَّةٌ عَنْ الْإِسْلَامِ بِاتِّفَاقِ الْمُسْلِمِينَ)। যদিও কখনো কেউ তওবা করে ইসলামের দিকে ফিরে আসে’ (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৪/৫৫)।

তবে শেষ জীবনে তিনি পূর্ববর্তী কর্মকান্ডের জন্য লজ্জিত হন এবং তওবা করে সালাফে ছালেহীনের অনুসৃত পথে ফিরে আসেন (ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ১৩/৫৫; ইবনুল ক্বাইয়িম, ছাওয়ায়েকুল মুরসালাহ ৩/১১৬৬)। ইমাম যাহাবী বলেন, আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করে দিবেন। কারণ তিনি প্রশংসিত পথের উপর মৃত্যুবরণ করেন (সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ২১/৫০০)।

প্রশ্ন  : সরকারী খাস জমিতে আম গাছ লাগিয়ে তার ফল খাওয়া বা বিক্রয় করে উপকৃত হওয়া যাবে কি?

-মোশাররফ হোসাইন

উত্তর : সরকারী খাস জমি অবহেলায় অনাবাদী হয়ে পড়ে থাকলে তাতে গাছ বা ফসল লাগিয়ে উপকৃত হওয়ায় কোন বাধা নেই। এক্ষেত্রে প্রথমে যিনি শুরু করবেন, তিনিই এর হকদার হবেন। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি এমন কোন জমি আবাদ করে, যার কোন মালিকানা নেই। তবে সেই তার অধিক হকদার (বুখারী হা/২৩৩৫, মিশকাত হা/২৯৯১)। তবে সরকার বাধা দিলে বা কোন কাজে লাগাতে চাইলে তা ফেরত দিতে হবে।

প্রশ্ন : বিবাহের মোহর নির্ধারণ হয়েছে অনেক বেশী। যা আমার সামর্থ্যের বাইরে। এমতাবস্থায় করণীয় কি?

-রাশেদুল ইসলাম

উত্তর : এমতাবস্থায় বিষয়টি স্ত্রীর নিকটে পেশ করবে। স্ত্রী যদি সন্তুষ্ট চিত্তে তাকে কিছু ছাড় দেয়, সেক্ষেত্রে স্বামীর জন্য তা গ্রহণ করা বৈধ হবে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহরানা ফরয হিসাবে প্রদান কর। তবে তারা যদি তা থেকে খুশী মনে তোমাদের কিছু দেয়, তাহ’লে তা তোমরা সন্তুষ্টচিত্তে স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর’ (নিসা ৪/৪)। বস্ত্ততঃ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে অধিক পরিমাণ মোহরানা ধার্য করা এবং পরে স্ত্রীর কাছে মাফ চাওয়া ধোঁকার শামিল। কারণ মোহর আদায় না করলে দুনিয়া ও আখেরাতে স্ত্রীর নিকটে ঋণগ্রস্ত হয়ে থাকতে হবে।

প্রশ্ন : নারীদের জন্য আয়াতুল কুরসী লিখিত স্বর্ণের লকেট ব্যবহার করা যাবে কি?

 -তামীমা

উত্তর : যাবে না। এটা একদিকে আল্লাহর বাণীর প্রতি অসম্মান। অন্যদিকে ইহূদী-খৃষ্টানদের অনুসরণ। যারা ক্রুস বা অনুরূপ কিছু ঝুলিয়ে রেখে সম্মান প্রদর্শন করে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অন্য কওমের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে’ (আহমাদ, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৩৪৭)। এছাড়া তাবীযের উপর ভ্রান্ত বিশ্বাসের ন্যায় কোরআনের আয়াত লিখিত এরূপ লকেট ব্যবহার করাও হারাম। কেননা সে ভাববে, কুরআনের আয়াত লিখিত ‘লকেট’ ঝুলানো থাকলে সে সকল প্রকার ক্ষতি থেকে বেঁচে যাবে। এরূপ আক্বীদা শিরকের অন্তর্ভুক্ত। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি তাবীয লটকালো, সে শিরক করল’ (আহমাদ হা/১৭৪৫৮; ছহীহাহ হা/৪৯২)। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন কিছু লটকাবে তার দায়-দায়িত্ব তার উপরই অর্পিত হবে’ অর্থাৎ আল্লাহ তার কোন দায়িত্ব নিবেন না’ (তিরমিযী হা/২০৭২; মিশকাত হা/৪৫৫৬)।

প্রশ্ন  : আযানের পূর্বে দরূদে ইবরাহীমী পড়া যাবে কি?

-শো‘আইব

উত্তর : আযানের পূর্বে দরূদে ইবরাহীমী পাঠ করার ব্যাপারে শরী‘আতের কোন নির্দেশনা নেই। সুতরাং তা বিদ‘আত। রাসূল (ছা) বলেন, যে ব্যক্তি এমন আমল করল, ‘যার প্রতি আমার নির্দেশ নেই তা প্রত্যাখ্যাত’ (মুসলিম হা/১৭১৮; মিশকাত হা/১৪০)। এছাড়া আযানের পূর্বে ও পরে আরো কিছু দো‘আ পাঠ করা হয় যেগুলিও বিদ‘আত (বিস্তারিত দ্রঃ ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) পৃঃ ৭৯)।

প্রশ্ন (২৪/৩৪৪) : ভুমিকম্প, বন্যা প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় কি দো‘আ পাঠ করা যায়?

-কাওছার আলম, জবাই, সাপাহার, নওগাঁ।

উত্তর : ভুমিকম্প, বন্যা প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বেশী বেশী আল্লাহর যিকির, দো‘আ এবং তওবা-ইস্তেগফার করতে হবে। একদা সূর্যগ্রহণ শুরু হলে রাসূল (ছাঃ) ক্বিয়ামত শুরু হয়েছে মনে করে ভীত হয়ে দাঁড়িয়ে যান। অতঃপর সূর্যগ্রহণের দীর্ঘ ছালাত আদায়ের পর বললেন, আল্লাহ তা‘আলা এরূপ বিপদ-মুছীবত দ্বারা তাঁর বান্দাদের সতর্ক করেন। অতএব তোমরা যখন এর সম্মুখীন হবে, তখন ভীত অবস্থায় যিকির, দো‘আ ও ক্ষমা প্রার্থনায় রত হও (বুখারী হা/১০৫৯)। এছাড়া তওবা-ইস্তেগফার সহ দো‘আ ইউনুস পাঠ করা আবশ্যক।

প্রশ্ন : অনেক বক্তা গানের সূরে ওয়ায করে থাকেন। এটা কি জায়েয?

-হাসান, ভাঙ্গা

উত্তর : গানের সূরে বক্তব্য দেয়া ঠিক নয়। বক্তব্যের উদ্দেশ্য হবে মানুষকে জান্নাতের পথ প্রদর্শন করা ও জাহান্নাম থেকে ভয় দেখানো। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা মানুষকে ডাক তোমাদের প্রভুর রাস্তায় প্রজ্ঞা ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে’... (নাহল ১৬/১২৫)। রাসূল (ছাঃ) যখন জুম‘আর খুৎবা দিতেন, তখন তাঁর দু’চোখ লাল হয়ে যেত। তাঁর কণ্ঠ উঁচু হ’ত এবং তাঁর ক্রোধ বেড়ে যেত। যেন তিনি সেনাবাহিনীকে কোন নির্দেশ দিচ্ছেন’ (মুসলিম হা/২০৪২; মিশকাত হা/১৪০৭)। সূর দিয়ে বক্তব্য দিলে মানুষ সূর শুনবে। কিন্তু কোন উপদেশ গ্রহণ করবে না। অবশ্য কুরআনের আয়াতসমূহ সুন্দর কন্ঠে তেলাওয়াত করতে হবে। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি সূরেলা কন্ঠে কুরআন তেলাওয়াত করেনা, সে ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়’ (বুখারী হা/৭৫২৭, মিশকাত হা/২১৯৪)। সাবধান থাকতে হবে বক্তৃতার উদ্দেশ্য যেন দুনিয়া উপার্জন না হয়। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘অতদিন ক্বিয়ামত হবে না, যতদিন না এমন একদল লোক বের হবে যারা তাদের যবান দিয়ে খাবে, যেমন গাভী তার জিহবা দিয়ে খায়’ (আহমাদ হা/১৫৯৭; মিশকাত হা/৪৭৯৯)।

প্রশ্ন : ইমাম যখন সালাম ফিরাবে তখন মুছল্লীরা কি তার জবাব দিবে?

-আল-আমীন

উত্তর : মুক্তাদীদেরকে তার জবাব দিতে হবে না। বরং মুক্তাদীরা তাই বলবে, ইমাম যা বলেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ইমাম নির্ধারণ করা হয় তার অনুসরণের জন্য (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১১৩৯)। উল্লেখ্য যে, ইমামের সালামের জবাব প্রদান সম্পর্কিত হাদীছটি যঈফ (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৯৫৮)।

প্রশ্ন : খালেছ তওবা দ্বারা কবীরা গোনাহ মাফ হয় কি? যেনা, চুরি ইত্যাদি অপরাধের ক্ষেত্রে হদের শাস্তি গ্রহণ করা তওবা কবুল হওয়ার জন্য শর্ত কি? অমুসলিম বা ইসলামী বিধান জারি নেই সেসব দেশে এ শাস্তি গ্রহণ করার উপায় কি?

-আব্দুল্লাহ আল-ছায়েম

উত্তর : খালেছ তওবা দ্বারা কবীরা গুনাহ মাফ হবে ইনশাআল্লাহ। কেননা আল্লাহ শিরক ব্যতীত বান্দার সকল গুনাহ ক্ষমা করতে পারেন (নিসা ৪/৪৮, ১১৬)। আল্লাহ বলেন, অন্যত্র আল্লাহ বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট খালেছ অন্তরে তওবা কর। অবশ্যই তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের গোনাহসমূহ মার্জনা করে দিবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার তলদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত (তাহরীম ৬৬/৮)। হদের বিধান জারি রয়েছে এরূপ দেশে হদের শাস্তি গ্রহণ করলে সেটাই তার পাপের কাফফারা হবে। যদি হদ জারি না হয়ে থাকে এবং আল্লাহ তার পাপ গোপন রাখেন, তাহ’লে তিনি তাকে ক্ষমাও করতে পারেন, শাস্তিও দিতে পারেন’ (বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/১৮)।

প্রশ্ন : বিউটি পার্লার করে বিবাহের সাজগোজ, ফেসিয়াল ও হেয়ার ট্রিটমেন্ট ইত্যাদি শরী‘আতসম্মত কাজগুলি করা যাবে কি? এছাড়া শরী‘আতসম্মত উপায়ে বিউটি পার্লার পরিচালনার উপায় কি?

-নাছের আহমেদ

উত্তর : নারী-পুরুষ প্রত্যেকে তার আল্লাহ প্রদত্ত সৌন্দর্য নিজেই বৃদ্ধি করতে পারে। এর জন্য আলাদাভাবে কোন ব্যবসায়িক দোকান খোলার প্রয়োজন নেই। বিউটি পার্লারে অসুন্দরকে সুন্দর করার মাধ্যমে প্রতারণা করা হয়। তাছাড়া বহু অনৈতিক কাজের পথ খুলে যায়। এর মধ্যে উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশী। অতএব এসব ব্যবসা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। দেহে বা চুলে কোন অসুখ থাকলে তার জন্য চিকিৎসা নিতে হবে। বিউটি পার্লারের কোন প্রয়োজন নেই।

প্রশ্ন : মাথা মাসাহ করার পদ্ধতি কি? মাথা একবার না তিনবার মাসাহ করা যরূরী?

-আব্দুর রহমান

উত্তর : মাথার সম্মুখ থেকে পিছনে নিয়ে সেখান থেকে পুনরায় সামনে এনে একবার মাসাহ করাই রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের নিয়মিত সুন্নাত। আব্দুল্লাহ বিন যায়েদ (রাঃ) রাসূল (ছাঃ) থেকে মাথা মাসাহের পদ্ধতি বর্ণনা করে বলেন, পানি নিয়ে দু’হাতের ভিজা আংগুলগুলি মাথার সম্মুখ হ’তে পিছনে ও পিছন হ’তে সম্মুখে বুলিয়ে একবার পুরো মাথা মাসাহ করবে’ (তিরমিযী, মিশকাত হা/৪১৫; আবুদাঊদ হা/১১৮, মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/৩৯৩-৯৪)। তবে তিনবার মাসাহ করা বিষয়ে ওছমান (রাঃ) থেকে একটি আমল পাওয়া যায় (আবুদাঊদ হা/১০৭, ১১০)।

প্রশ্ন  : হাদিয়া ও ঘুষ এবং মুনাফা ও সূদের মধ্যে পার্থক্য কি?

-আব্দুল্লাহ, নাযিরা বাজার

উত্তর : ‘হাদিয়া’ হ’ল কোন কিছুর বিনিময় ছাড়াই কাউকে কোন কিছু প্রদান করা। এটি শরী‘আতে বৈধ (বুখারী হা/২৫৭৬)। রাসূল (ছাঃ) ভালোবাসা বৃদ্ধির মাধ্যম হিসাবে পরস্পরকে হাদিয়া দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন (আদাবুল মুফরাদ, ছহীহুল জামে‘ হা/৩০০৪)। আর অন্যায়ভাবে কিছু পাওয়ার আশায় কাউকে কিছু প্রদান করাকে ‘ঘুষ’ বলে। এটি হারাম (ছহীহ ইবনু হিববান হা/৫০৭৬; মিশকাত হা/৩৭৫৩)। ঘুষ দাতা ও ঘুষ গ্রহীতা উভয়ের উপর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের লা‘নত (আবুদাউদ হা/৩৫৮০; ইবনু মাজাহ হা/২৩১৩)।

‘মুনাফা’ হ’ল হালাল ব্যবসার মাধ্যমে উপার্জিত লভ্যাংশ। এটি শরী‘আতে বৈধ। কিন্তু অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে উপার্জিত মুনাফা অবৈধ বা হারাম (ছহীহ ইবনু হিববান হা/৪৯৩৮, সনদ ছহীহ)। ‘সূদ’ হ’ল একই জাতীয় জিনিসের বিনিময়ে অতিরিক্ত গ্রহণ করা, যা হারাম (বাক্বারাহ ২/২৭৫; মুসলিম হা/১৫৯৮)। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, ‘প্রত্যেক ঋণ যা লাভ নিয়ে আসে, সেটাই সূদ’ (ইরওয়া হা/১৩৯৭)।

প্রশ্ন  : প্রচলিত আছে যে, আরশের নীচে রাসূল (ছাঃ)-এর নাম লেখা ছিল। আদম (আঃ) ঐ নামের অসীলায় ক্ষমা পেয়েছিলেন। এ বক্তব্যের কোন ভিত্তি আছে কি?

-মাহফূয, মুরাদনগর

উত্তর : উক্ত মর্মের বর্ণনাটি জাল। ইমাম যাহাবী, ইবনু তায়মিয়াহ, ইবনু হাজার, আলবানী সকলেই এ ব্যাপারে একমত (হাকেম হা/৪২২৮, সিলসিলা যঈফাহ হা/২৫)।

প্রশ্ন  : সমকামিতা কিরূপ গোনাহের কাজ? এর শাস্তি কি?

-সাজিদুল ইসলাম

উত্তর : সমকামিতা একটি ঘৃণ্য অপরাধ এবং কবীরা গুনাহ। এই পাপের কারণেই বর্তমান পৃথিবী এইডস-এর মত মরণ ব্যধিতে ভরে গেছে। এটাই আল্লাহর গযব। এ অপরাধের কারণে বিগত যুগে আল্লাহ তা‘আলা কওমে লূতকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন (আ‘রাফ ৭/৮০-৮৪; হিজর ১৫/৭২-৭৬)। এর শাস্তি হ’ল সমকামীদের উভয়কে হত্যা করা। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা যাকে লুৎ (আঃ)-এর সম্প্রদায়ের মত পুরুষে পুরুষে অপকর্ম করতে দেখবে তাদের উভয়কে হত্যা কর (তিরমিযী হা/১৪৫৬; আবুদাউদ হা/৪৪৬২; মিশকাত হা/৩৫৭৫)। তিনি আরো বলেন, আল্লাহ তা‘আলা কওমে লূতের ন্যায় অপকর্মকারীদের প্রতি লা‘নত করেছেন, তিনি একথাটি তিনবার বললেন (আহমাদ হা/২৯১৫; ছহীহাহ হা/৩৪৬২)। তবে এ শাস্তি বাস্তবায়নের দায়িত্ব রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলদের (কুরতুবী)। না করলে সরকার গোনাহগার হবে।

প্রশ্ন : অসুখের কারণে ১৭ বছর বয়সে ব্যাপকভাবে চুল পাকতে শুরু করেছে। এক্ষণে এরূপ চুলে কালো খেযাব ব্যবহার করা যাবে কি?

-এমদাদুল ইসলাম

উত্তর : এরূপ অবস্থায় যে কোন বৈধ চিকিৎসা গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে কালো খেযাব ব্যবহার করা যাবে না। কেননা রাসূল (ছাঃ) কালো খেযাব ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন (মুসলিম হা/২১০২, নাসাঈ হা/৫০৭৫, মিশকাত হা/২৪৭০, ৪৪২৪, ৪৪৫২)। আর অকালপক্কতা ও বার্ধক্য লুকানোর জন্য কালো খেযাব ব্যবহার করা মর্মে যে আছারগুলি বর্ণিত হয়েছে, তা মুনকার বা যঈফ (সিলসিলা যঈফাহ হা/২৯৭২)।

প্রশ্ন : জনৈক নারীর সাথে জনৈক পুরুষের অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। এক্ষণে উক্ত নারীর মেয়েকে সে বিবাহ করতে পারবে কি?

-আব্দুর রহমান, ধানমন্ডি

উত্তর: কাজটি অত্যন্ত গর্হিত হলেও উক্ত নারীকে বিবাহ করতে বাধা নেই। কারণ কোন হারাম সম্পর্ক কোন হালাল সম্পর্ক স্থাপনে বাধা হতে পারে না। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, ‘যেনা বৈবাহিক বন্ধনকে হারাম করে না’ (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা, বায়হাক্বী, ইরওয়া হা/১৮৮১, ৬/২৮৭ পৃঃ)। এছাড়া শরী‘আতে যে ১৪জন নারীকে বিয়ে করা হারাম করা হয়েছে (নিসা ৪/২৩), উক্ত নারী তাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।

প্রশ্ন : কোন অমুসলিম ছাত্রকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করায় শরী‘আতে কোন বাধা আছে কি?

-লুৎফর হাসান সাগর

* [লুৎফর রহমান নাম রাখুন]

উত্তর : ধর্মের ব্যাপারে ক্ষতি বা ফিৎনার আশংকা না থাকলে স্বাভাবিক বন্ধুত্বে কোন দোষ নেই। আল্লাহ বলেন, ‘ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কার করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ন্যায় বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না... (মুমতাহিনাহ ৬০/৮)। তবে তাকে সর্বদা ইসলামের দিকে দাওয়াত দিতে হবে (আলে ইমরান ৩/১১০)।

প্রশ্ন : স্বামী-স্ত্রী উভয়ের সম্মতিতে কাযী অফিসের মাধ্যমে একত্রে ৩ তালাকের মাধ্যমে ছাড়াছাড়ির ৮ মাস পর তারা পুনরায় একত্রিত হতে পারবে কি?

-ফীরোয, পুঠিয়া

উত্তর : উভয়ের সম্মতিতে নতুন বিবাহের মাধ্যমে স্বামী তার স্ত্রীকে ফেরত নিতে পারবে। কেননা এক মজলিসে তিন তালাক এক তালাক হিসাবে গণ্য হবে। আবদু ইয়াযীদ তার স্ত্রী উম্মে রুকানাকে তালাক দেন। পরবর্তীতে তিনি দারুণভাবে মর্মাহত হন। তখন রাসূল (ছাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি তোমার স্ত্রীকে কিভাবে তালাক দিয়েছ? তিনি উত্তরে বলেন, এক মজলিসে তিন তালাক দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ওটা এক তালাক হয়েছে। তুমি স্ত্রীকে ফেরত নাও’ (আবুদাঊদ হা/২১৯৬; আহমাদ হা/২৩৮৭; আওনুল মা‘বূদ ৬/২৭৯; যাদুল মা‘আদ ৫/২২৯; সনদ হাসান)। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যামানায় এবং হযরত আবু বকর (রাঃ) ও ওমর (রাঃ)-এর খেলাফতের প্রথম দু’বছর একত্রিত তিন তালাককে এক তালাক গণ্য করা হ’ত (মুসলিম হা/১৪৭২; ফিক্বহুস সুন্নাহ ২/২৯৯)। অতএব আপনার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে কোন বাধা নেই।

প্রশ্ন : জামা‘আত অবস্থায় রুকূ থেকে উঠে কওমা ও দুই সিজদার মধ্যবর্তী বৈঠকের দো‘আ সরবে না নীরবে পাঠ করতে হবে?

-বায়েযীদ হোসাইন

উত্তর : উক্ত দো‘আগুলি অনুচ্চস্বরে পাঠ করা উত্তম। আল্লাহ বলেন, ‘তোমার প্রতিপালককে স্মরণ কর মনে মনে কাকুতি-মিনতি ও ভীতি সহকারে অনুচ্চস্বরে সকালে ও সন্ধ্যায়। আর তুমি উদাসীনদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না’ (আ‘রাফ ৭/২০৫, ৫৫; ইসরা ১৭/১১০)।

প্রশ্ন : চাকুরী শেষে ছাত্র-ছাত্রী কর্তৃক শিক্ষককে যে উপঢৌকন প্রদান করা হয়, তা নেওয়া জায়েয হবে কি?

-আব্দুল কুদ্দূস

উত্তর : নিঃসন্দেহে জায়েয হবে। কারণ এর মাধ্যমে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হাদিয়া গ্রহণ করতেন ও অন্যকে প্রদান করতেন’ (বুখারী হা/১৭৩৪)। তিনি বলেন, ‘তোমরা পরস্পরকে হাদিয়া দাও ও মহববত বৃদ্ধি কর’ (ছহীহুল জামে‘ হা/৩০০৪)।

প্রশ্ন : গোসল বা ওযূ করা হয় এরূপ পুকুরের পানিতে পেশাব করা যাবে কি?

-হাসান মুন্তাছির

উত্তর : পানির ব্যাপারে সাধারণ নির্দেশ এই যে, বদ্ধ পানিতে পেশাব করা যাবে না (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৭৪)। এমনকি বদ্ধ পানিতে ফরয গোসলও করা যাবে না (মুসলিম হা/২৮৩)। তবে এই নিষেধাজ্ঞা হারামের পর্যায়ে যাবে, যখন পানি কম হবে। আর বেশী হলে তা মাকরূহ হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যদি পানি দুই কুল্লা হয়, তাহ’লে তা অপবিত্র হয় না’ (আবুদাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/৪৭৭ ‘পানি’ অনুচ্ছেদ)। অতএব যদি বদ্ধ পানি দুই কুল্লা অর্থাৎ ২২৭ কেজি বা তার বেশী হয়, তাহ’লে তা অপবিত্র হবে না। যদি কম হয়, তাহ’লে নাপাকী পড়ার কারণে তা অপবিত্র হয়ে যাবে। এক্ষণে পানির পরিমাণ কম হৌক বা বেশী হৌক, যদি তার স্বাদ, গন্ধ ও রং তিনটি গুণের যেকোন একটির পরিবর্তন হয়ে যায়, তবে তা অপবিত্র বলে গণ্য হবে। উল্লেখ্য যে, ‘রং, স্বাদ ও গন্ধ বিনষ্ট হওয়ার কারণে পানি অপবিত্র হয়ে যায়’ মর্মে ইবনু মাজাহ বর্ণিত হাদীছটির (হা/৫২১) সনদ ‘যঈফ’ হ’লেও মর্মগতভাবে ছহীহ। ইবনুল মুনযির বলেন, এ ব্যাপারে বিদ্বানগণের মধ্যে ঐক্যমত রয়েছে’ (বিস্তারিত দ্রঃ ছফিউর রহমান মুবারকপুরী, বুলূগুল মারাম হা/৪-৫ ‘পানি’ অনুচ্ছেদ)। অতএব বদ্ধ পানি কম হৌক বা বেশী হৌক তাতে পেশাব করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

প্রশ্ন : ঈসা (আঃ) কি বর্তমানে জীবিত? ক্বিয়ামতের কতদিন পূর্বে তিনি আসবেন এবং কি কি কাজ করবেন?

-আতীক মৃধা

উত্তর : ঈসা (আঃ) দ্বিতীয় আসমানে জীবিত আছেন (আলে ইমরান ৩/৫৫, নিসা ৪/১৫৭; বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮৬২)। তিনি দামেশকের পূর্বপ্রান্তের শ্বেত মিনার হ’তে হলুদ বর্ণের দু’টি পোষাক পরিহিত অবস্থায় দু’জন ফেরেশতার পাখায় ভর করে অবতরণ করবেন।... অতঃপর তিনি বায়তুল মুক্বাদ্দাসের ‘লুদ্দ’ দরজার নিকটে ‘দাজ্জাল’কে হত্যা করবেন।... অতঃপর আল্লাহ ‘ইয়াজূজ-মা’জূজ’কে পাঠাবেন। তারা প্রত্যেকে উঁচু জায়গা থেকে বের হয়ে দ্রুত বেগে নীচে চলে আসবে (আম্বিয়া ২১/৯৬)।... তারা সামনে যাকে পাবে, তাকেই হত্যা করবে।... তখন ঈসা ও তাঁর ঈমানদার সাথীগণ আল্লাহর নিকট দো‘আ করবেন। ফলে আল্লাহর পক্ষ হতে গযব অবতীর্ণ হয়ে ‘ইয়াজূজ-মা’জূজ’ সব ধ্বংস হয়ে যাবে।...
ঈসা (আঃ) ইসলামী শরী‘আত অনুযায়ী পৃথিবীতে ইনছাফ প্রতিষ্ঠা করবেন। ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলবেন। শূকর হত্যা করবেন। জিযিয়া বিলুপ্ত করবেন (কারণ তখন সবাই মুসলমান হবে (নিসা ৪/১৫৯)। সে সময় সম্পদের এমন প্রাচুর্য হবে যে, তা নেবার মত লোক পাওয়া যাবে না’... (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৫০৫)। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, মানুষের মন থেকে কৃপণতা, হিংসা ও বিদ্বেষ দূর হয়ে যাবে’।... তখন মুসলমানদের মধ্য থেকে ইমাম মাহদী ইমাম হবেন এবং ঈসা হবেন মুক্তাদী। এটি হবে উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে প্রদত্ত বিশেষ সম্মান’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৫০৬-০৭)। মাহদী রাসূল (ছাঃ)-এর বংশধর হবেন’ (তিরমিযী, আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৫৪৫২-৫৩)। তিনি সাত বছর দুনিয়ায় অবস্থান করবেন’ (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৫৪৫৪)। ঈসা (আঃ)ও দুনিয়াতে সাত বছর অবস্থান করবেন’ (মুসলিম হা/২৯৪৩)। ঊর্ধ্বারোহনের পূর্বের ৩৩ বছর এবং দুনিয়ায় অবতরণের পরের ৭ বছর মিলে তাঁর বয়স হবে মোট ৪০ বছর। তারপর তিনি মৃত্যুবরণ করবেন। মুসলমানগণ তাঁর জানাযার ছালাত আদায় করবে (আবুদাঊদ শরহ ‘আউনুল মা‘বূদ সহ হা/৪৩২৪, ছহীহাহ হা/২১৮২)। এ সময় মানুষ সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করবে। হঠাৎ একদিন স্নিগ্ধ বায়ু প্রবাহিত হবে। তাতে সকল ঈমানদার মানুষ মৃত্যুবরণ করবে। কেবল পাপী লোকেরাই অবশিষ্ট থাকবে। যারা গাধার ন্যায় পরস্পর দ্বন্দ্ব-কলহে লিপ্ত হবে। অতঃপর তাদের উপরেই ক্বিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৪৭৫)।

No comments:

Post a Comment