Pages

আগস্ট মাসের প্রশ্নোত্তর


প্রশ্নোত্তর  

 প্রশ্ন  : আদম ও ইবরাহীম (আঃ) সহ অন্যান্য নবীগণ মৃত্যুবরণ করা সত্ত্বেও মিরাজ রজনীতে রাসূল (ছাঃ) কিভাবে তাঁদের সাথে সাক্ষা করলেন?
-রায়হানুল করীম, বাড্ডা, ঢাকা
উত্তর : নবী-রাসূলগণ আলামে বারযাখে তথা রূহানী জগতে জীবিত আছেন (মুসলিম হা/২৩৭৫) এবং মিরাজ রজনীতে তাদেরকে সাথে নিয়ে রাসূল (ছাঃ) বায়তুল মুক্বাদ্দাসে ছালাত আদায় করেছেন (মুসলিম হা/১৭২; মিশকাত হা/৫৮৬৬) নবীগণের দেহ দুনিয়ার কবরে থাকা সত্ত্বেও মিরাজ রজনীতে রাসূল (ছাঃ) কিভাবে তাদের সাথে আসমানে সাক্ষা করলেন, এরূপ প্রশ্নের উত্তরে ছহীহ বুখারীর ভাষ্যকার ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, তাঁদের রূহসমূহকে দেহের আকৃতিতে অথবা সশরীরে রাসূল (ছাঃ)-এর সম্মানে তাঁর নিকটে উপস্থিত করা হয়েছিল (ফাহুল বারী ৭/২১০, হা/৩৮৮৭-এর আলোচনা)অতএব রাসূল (ছাঃ)-কে যেভাবে আল্লাহ রক্তমাংসের দেহসহ মিরাজে নিয়ে গেলেন, একইভাবে অন্য নবীগণকেও স্ব স্ব কবর থেকে সশরীরে উঠিয়ে আনা আদৌ অসম্ভব নয়আল্লাহ যা খুশী তাই করতে পারেন (বুরূজ ৮৫/১৬)



প্রশ্ন : আমি রফতানী প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (বেপজা) -এ চাকুরী করিএখানে সব কাজ ঠিকাদারের মাধ্যমে করানো হয়কাজ দেওয়ার সময় ঠিকাদার আমাকে প্রতিদান স্বরূপ কিছু হাদিয়া দিতে চায়এটা গ্রহণ করা যাবে কি?
-আমীনুল ইসলাম, বেপজা, ঢাকা
উত্তর : এ ধরণের হাদিয়া গ্রহণ করা যাবে নাউক্ত অর্থ একদিকে ঘুষ গ্রহণ অন্যদিকে খেয়ানতের অন্তর্ভুক্ত হবেরাসূল (ছাঃ) ঘুষ দাতা ও ঘুষ গ্রহীতার প্রতি লানত করেছেন (আবুদাউদ হা/৩৫৮০; ইবনু মাজাহ হা/২৩১৩; মিশকাত হা/৩৭৫৩) অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, যখন আমরা কাউকে কোন কাজে নিয়োগ করি, তখন তাকে ভাতা প্রদান করিঅতএব সে এর অতিরিক্ত যা গ্রহণ করবে সেটা খেয়ানত হবে (আবুদাঊদ হা/২৯৪৩; মিশকাত হা/৩৭৪৮)অতএব উক্ত অর্থ গ্রহণ করা হতে বিরত থাকা আবশ্যক
প্রশ্ন : ইশরাক, চাশত ও আউওয়াবীনের ছালাতের সঠিক সময় কোনটি? প্রত্যেকটি পৃথক পৃথকভাবে আদায় করাই কি সুন্নাত?
-ফাহীম মুনতাছির, ধানমন্ডি, ঢাকা
উত্তর : উল্লিখিত তিনটি ছালাতই মূলতঃ একই ছালাতসময়ের ব্যবধানের কারণে নামের ভিন্নতা হয়ে থাকেযেমন শুরূক্ব’  অর্থ  সূর্য  উদিত হওয়া   ‘ইশরাক্ব’  অর্থ  চমকিত হওয়াযোহাঅর্থ সূর্য গরম হওয়াএই ছালাত সূর্যোদয়ের পরপরই প্রথম প্রহরের শুরুতে পড়লে একেছালাতুল ইশরাক্ববলা হয় এবং কিছু পরে দ্বিপ্রহরের পূর্বে পড়লে তাকেছালাতুয যোহাবা চাশতের ছালাতবলা হয়আবার দুপুরের পূর্বে পড়লে এই ছালাতকেই ছালাতুল আউওয়াবীন বলে (মুসলিম হা/৭৪৮; ছহীহাহ হা/১১৬৪; মিশকাত হা/১৩১২; মিরআত ৪/৩৫১) অতএব এ ছালাতটি তিনটি সময়ের যে কোন সময়ে পড়লেই যথেষ্ট হবেউল্লেখ্য যে, মাগরিবের পরের ছয়, বিশ বা যে কোন পরিমাণ নফল ছালাতকে আউওয়াবীনবলার হাদীছগুলি অত্যন্ত যঈফ (তিরমিযী হা/৪৩৫; মিশকাত হা/১১৭৩-৭৪; যঈফাহ হা/৪৬৯, ৪৬৭, ৪৬১৭)
এই ছালাত বাড়ীতে পড়া সুন্নাতএটি সর্বদা পড়া এবং আবশ্যিক গণ্য করা ঠিক নয়কেননা আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) কখনও পড়তেন, কখনো ছাড়তেন(মিরআত শরহ মিশকাত ৪/৩৪৪-৫৮)

প্রশ্ন : আমি নওমুসলিম হিসাবে অমুসলিম পিতা-মাতা, ভাই-বোনের সাথে সম্পর্ক রাখতে পারব কি? তাদের সাথে বসবাস ও তাদের রান্না করা খাবার খাওয়া যাবে কি?
উত্তর : অমুসলিম পিতা-মাতা, ভাই-বোনের সাথে সম্পর্ক রাখতে হবেআল্লাহ তাআলা পিতা-মাতার সাথে সর্বাবস্থায় সদাচরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন (লোকমান ৩১/১৫)রাসূল (ছাঃ) আসমা (রাঃ)-কে তার অমুসলিম মায়ের সাথে সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছিলেন (বুখারী হা/৩১৮৩, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯১৩) এছাড়া আবু হুরায়রা (রাঃ) তার মুশরিক মাতার সাথেই বসবাস করতেন (মুসলিম হা/২৪৯১, মিশকাত হা/৫৮৯৫ মুজেযাহঅনুচ্ছেদ)তাদের রান্না করা খাবার খেতেও কোন বাধা নেইকেননা রাসূল (ছাঃ) ইহূদী ও মুশরিক মহিলার বাড়ীতে খেয়েছেন ও পান করেছেন (বুখারী হা/৩৪৪, মিশকাত হা/৫৮৮৪, ৫৯৩১)তবে তাদের যবেহকৃত প্রাণীর গোশত খাওয়া যাবে না (বাক্বারাহ ২/১৭৩; মায়েদাহ ৫/৩) আর ভাই-বোনের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে হবেএকদা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে একটি কারুকার্য খচিত রেশম মিশ্রিত পোষাক আসলে তিনি তা ওমর (রাঃ)-কে প্রদান করলে তিনি তা মক্কায় অবস্থানকারী তার মুশরিক ভাইয়ের পরিধানের জন্য পাঠিয়ে দেন (বুখারী হা/৫৯৮১)
প্রশ্ন : তরীকতপন্থীরা বলে থাকেন যে, আল্লাহ স্বয়ং রাসূল (ছাঃ)-এর উপর দরূদ পড়েনএকথা সত্য কি?
-ছদরুদ্দীন, জামালপুর
উত্তর : বক্তব্যটি সঠিক নয়কেননা আল্লাহর পক্ষ হতে দরূদ অর্থ তাঁর রহমত নাযিল করাফেরেশতাদের পক্ষ থেকে দরূদ অর্থ রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য আল্লাহর নিকটে রহমত প্রার্থনা করাআর মুমিনদের পক্ষ থেকে দরূদ অর্থ রাসূল (ছাঃ)-এর জন্য দোআ করা যেরূপ তিনি শিক্ষা দিয়েছেন (কুরতূবী, তাফসীর সূরা আহযাব ৫৬ আয়াত)আর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বীয় উম্মতকে দরূদে ইবরাহীমী পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন (বুখারী হা/৩৩৭০; মুসলিম হা/৪০৬; মিশকাত হা/৯১৯)          
প্রশ্ন  : চার হাতে মুছাফাহা করার বিষয়টি কি ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন
-শাহাদত বিন আব্দুর রহমান, ইশ্বরদী
উত্তর : মুছাফাহা (المصافحة) শব্দটি বাবে مفاعلة -এর ক্রিয়ামূলএর আভিধানিক অর্থ, الإفضاء بصفحة اليد إلي صفحة اليد অর্থা এক হাতের তালুর সাথে অন্য হাতের তালুকে অাঁকড়িয়ে ধরা (ইবনু হাজার, হুলবারী ১১/৫৪) আরবী ভাষার কোন অভিধানে চার হাতের সংযোগকে মুছাফাহা বলে অভিহিত করা হয়নি আর দুই দুই করে চার হাতের তালু মিলিয়ে মুছাফাহার প্রমাণে কোন মারফূ হাদীছ নেই (ছিদ্দীক হাসান খান ভূপালী, তানকীহুর রুওয়াত শরহ মিশকাত ৩/২৮৭ পৃঃ, টীকা-৬)
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করল যে, আমি কি আমার বন্ধুর আগমনে মাথা নত করব? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, নাতবে কি আলিঙ্গন করব? তিনি বললেন, নাআমি কি তাকে চুম্বন করব? তিনি বললেন, নাসে বলল যে, তবে কি তার এক হাতে মুছাফাহা করব? (أَفَيَأْخُذُ بِيَدِهِ وَيُصَافِحُهُ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, হ্যাঁ (তিরমিযী হা/২৭২৮; ছহীহাহ হা/১৬০; মিশকাত হা/৪৬৮০ শিষ্টাচারঅধ্যায় মুছাফাহা ও মুআনাকাঅনুচ্ছেদ) 
হাসান ইবনে নূহ বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে বুসরকে বলতে শুনেছি, তোমরা আমার এই হাতের তালুটি দেখেছ? তোমরা সাক্ষী থাক, আমি এই তালুটি মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর তালু মোবারকে রেখেছিঅর্থা মুছাফাহা করেছি (আহমাদ হা/১৭৭২৬, তুহফাতুল আহওয়াযী ৭/৪৩০ পৃঃ মুছাফাহাঅনুচ্ছেদ)
তবে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ থেকে বর্ণিত যে, তাঁকে তাশাহহুদ শিক্ষা দেওয়ার সময় তাঁর হাতের তালুটি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দুহাতের তালুর মধ্যে ছিল (বুখারী হা/৬২৬৫)উক্ত হাদীছটির ব্যাখ্যায় আবদুল হাই লাক্ষ্ণৌবী হানাফী স্বীয় ফওয়া গ্রন্থে বলেছেন, হাদীছটি মুছাফাহার সাথে সম্পৃক্ত নয়বরং শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীর অধিক আগ্রহ সৃষ্টির জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরূপ করেছিলেন (তুহফাতুল আহওয়াযী হা/২৮৭৫-এর ভাষ্য, ৭/৫২২)
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ)-এর উক্ত হাদীছ থেকেও চার হাতের তালু মিলানো প্রমাণিত হয় না; বরং তিন হাতের তালু প্রমাণিত হয় সুতরাং উভয়ের ডান হাতের তালু দ্বারা মুছাফাহা করাই ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত
প্রশ্ন : কুর্দীদের পরিচয় ও আক্বীদা-বিশ্বাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই
-অহীদুল ইসলাম, গোপালগঞ্জ
উত্তর : কুর্দীরা পশ্চিম এশিয়ার একটি নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীজনসংখ্যা প্রায় পৌনে তিন কোটিতুরস্ক, ইরাক, ইরান ও আর্মেনিয়ায় এদের আবাসস্থলকুর্দি এদের প্রধান ভাষাএদের অধিকাংশই (প্রায় ৯০%) সুন্নী মুসলিম এবং শাফেঈ মাযহাবের অনুসারীকিছু সংখ্যক ছূফী, শীআ ও খৃষ্টান রয়েছেবিভিন্ন দেশে তারা তাদের এলাকাসমূহকেকুর্দিস্তাননামকরণ করলেও, তাদের কোন স্বাধীন রাষ্ট্র নেইবায়তুল মুক্বাদ্দাস বিজয়ী প্রখ্যাত সেনানায়ক সুলতান ছালাহুদ্দীন আইয়ূবী ছিলেন কুর্দী ভাষীকুর্দীরা ভাষাভিত্তিক জনগোষ্ঠী হওয়ায় তাদের আক্বীদা নিয়ে পৃথকভাবে কোন আলোচনার সুযোগ নেই
প্রশ্ন : ছেলের বয়স কত বছর হলে সে যেকোন সফরের ক্ষেত্রে মায়ের মাহরাম হিসাবে গণ্য হবে
-মুহাম্মাদ রুবেল আমীন
প্রাইম ব্যাংক, এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা
[(রূবেল নামটি বাদ দিয়ে আরবীতে সুন্দর নাম রাখুন (স.স.)]
উত্তর : মাহরাম হওয়ার জন্য বালেগ ও জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া শর্ত (উছায়মীন, শারহুল মুমতে৭/৪০-৪১) ইমাম আহমাদ (রহঃ) -কে শিশু কারো মাহরাম হিসাবে গণ্য হবে কি-না সে ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, নাযতক্ষণ না তার স্বপ্নদোষ হয়।... মাহরাম থাকার উদ্দেশ্য হল নারীকে হেফাযত করাআর প্রাপ্তবয়স্ক ও জ্ঞানসম্পন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত উক্ত উদ্দেশ্য হাছিল হওয়া সম্ভব নয় (ইবনু কুদামা, মুগনী ৩/৯৯)
প্রশ্ন : হোটেলের বেঁচে যাওয়া খাবার আশ-পাশে থাকা কুকুরদের খাইয়ে দেওয়ায় শরীআতে কোন বাধা আছে কি? এতে বেওয়ারিশ কুকুর পোষার ন্যায় গোনাহগার তে হবে কি?
-আব্দুর রাকীব, টেমপানিছ, সিঙ্গাপুর
উত্তর : হোটেলের বেঁচে যাওয়া খাবার গরীব মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেওয়াই উত্তমতবে তা সম্ভব না হলে পশু-পাখিকে দেওয়ায় কোন বাধা নেইবরং এতে প্রভূত নেকী অর্জিত হবেরাসূল (ছাঃ) বলেন, প্রত্যেক তাযা প্রাণ রক্ষায় ছওয়াব রয়েছে এক লোক এক পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করানোর কারণে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয় (বুখারী হা/২৩৬৩, মিশকাত হা/১৯০২)তিনি বলেন, একজন ব্যভিচারিণী নারী একটি পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করানোর কারণে জান্নাতে যাবে (বুখারী হা/৩৪৬৭)আর বেঁচে যাওয়া খাবার পশু-পাখিকে খাওয়ানোর সাথে প্রাণী পোষার কোন সম্পর্ক নেইঅতএব কুকুরকে খাবার দেওয়ায় গুনাহ হবে না
প্রশ্ন  : আমি হিন্দু পরিবারে বিবাহ করেছি এবং দুজনেই ইসলামী জীবন যাপন করছিএক্ষণে আমার হিন্দু শ্বশুরকুলের বাড়ীতে বেড়াতে যাওয়া, খাওয়া-দাওয়া, ছালাত আদায় করা ইত্যাদি জায়েয হবে কি?
-যাকির হোসাইন, ভারত
উত্তর : হিন্দু শ্বশুর-শাশুড়ীর বাড়ীতে পিতা-মাতার হক আদায়ের উদ্দেশ্যে গমন করায় বাধা নেইতবে তা যেন তাদের ধর্মীয় উসব উপলক্ষে না হয় কেননা ইসলামী শরীআতে অমুসলিমদের ধর্মীয় সবে অংশগ্রহণ করা হারাম (ফুরকান ৭২; আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৩৪৭)সেখানে তাদের যবেহকৃত পশু ও হারাম খাদ্য ব্যতীত অন্যান্য খাবার খাওয়া যাবে (বুখারী হা/২৬১৯-২০) এবং ছালাত আদায় করা যাবে (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৭৩৭)
প্রশ্ন : কুকুর লালন-পালন করার জন্য শরীআতে কি কি শর্ত রয়েছে?
-গোলাম রববানী, চাঁপাই নবাবগঞ্জ
উত্তর : কুকুর পালনের জন্য শর্ত হ, (১) পশু চরানো, শিকার করা এবং ক্ষেত-খামার ও বাড়িঘর পাহারা দেওয়া এই তিন প্রকার উদ্দেশ্য সাধনের জন্যই কেবল কুকুর পালন করা যাবেএ ব্যতীত অন্য উদ্দেশ্যে কোন কুকুর বাড়িতে রাখলে এক ক্বীরাত সমপরিমাণ নেকী কমে যাবে (মুসলিম হা/১৫৭৫, মিশকাত হা/৪০৯৯)অন্য বর্ণনায় রাসূল (ছাঃ) এরূপ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ব্যতীত অন্য সকল কুকুরকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন (মুসলিম হা/১৫৭১, মিশকাত হা/৪১০১) 
(২) চোখের উপর সাদা চিহ্ন ওয়ালা কুচকুচে কালো কুকুর কোন অবস্থাতেই গ্রহণ করা যাবে নাকারণ এগুলো শয়তান, একে হত্যা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে (মুসলিম হা/১৫৭২, মিশকাত হা/৪১০০, ‘শিকার ও যবহঅধ্যায়, ‘কুকুরের বর্ণনাঅনুচ্ছেদ)
আর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরের শিকার ভক্ষণের ক্ষেত্রে দুটি শর্ত রয়েছে, (১) যদি কুকুরটি নিজে নিহত পশুর কিছু অংশ না খেয়ে ফেলে (২) শিকার করার সময় অন্য কোন কুকুর যেন প্রশিক্ষিত কুকুরের সাথে শামিল না হয় (বুখারী হা/৫৪৮৪, মিশকাত হা/৪০৬৪)
প্রশ্ন : কম্পিউটার বিক্রয়ের ব্যবসা করা যাবে কি? অধিকাংশ মানুষ যে এর মাধ্যমে মন্দ কাজ করছে সেহিসাবে টিভির-মোবাইলের ন্যায় এর ব্যবসাও হারাম হবে কি?
-মুশতাক, এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা
উত্তর : কম্পিউটার-টিভি-মোবাইল কোনটিই প্রকৃতিগতভাবে হারাম নয়এর প্রত্যেকটিরই ভালো-মন্দ দিক আছে মুমিন ভালোটি গ্রহণ করবে ও খারাপটি পরিত্যাগ করবেতবে বর্তমান সমাজের সার্বিক পরিস্থিতি মানুষকে সর্বদা পাপের দিকে প্ররোচিত করছেফলে এসব ইলেক্ট্রিক ডিভাইস অনেক মানুষ পাপের কাজে ব্যবহার করছেতাই এসব ব্যবসা থেকে দূরে থেকে এমন ব্যবসা করা উত্তম, যাকে মানুষ কোন পাপের কাজে ব্যবহার করার সুযোগ না পায় বরং নেকীর কাজে ব্যবহার করে থাকেআর এসবের ব্যবসা করলেও ক্রেতারদেরকে ইসলামী বিধি-বিধান অনুসরণের এবং সকল প্রকার অশ্লীলতা হতে দূরে থাকার আহবান জানাতে হবে (নাহল ১২৫)
প্রশ্ন : মসজিদের বারান্দা কি মসজিদের অন্তর্ভুক্ত? বারান্দায় মসজিদে প্রবেশের ছালাত ও দোআ পাঠ করা যাবে কি?
-আইয়ূব, পাটগ্রাম, লালমণিরহাট
উত্তর : মসজিদের বারান্দা মসজিদের অন্তর্ভুক্ত (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৫/২৩৪) মসজিদের ভিতর এবং বারান্দা এগুলি মসজিদ নির্মাণের নিয়ম মাত্র এবং সব স্থানে একই নেকী অর্জিত হবেতাই মসজিদের বারান্দায় ডান পা রাখার সময়েই দোআ পাঠ করতে হবে এবং বারান্দায় ছালাত আদায় করা যাবে
প্রশ্ন : মেয়েরা বোরকা পরে সাইকেল ইত্যাদি চালিয়ে স্কুলে যেতে পারবে কি?
- শারমীন সুলতানা, কলারোয়া, সাতক্ষীরা
উত্তর : বোরকা পরে হলেও মেয়েদের কোন ধরনের ড্রাইভ করা ঠিক নয়প্রথমতঃ এগুলি পুরুষালী কাজ এবং এতে তার বেহায়াপনা প্রকাশ পায়আল্লাহ প্রকাশ্য ও গোপন যাবতীয় বেহায়াপনাকে নিষিদ্ধ করেছেন (রাফ ৭/৩৩)এমনকি এরূপ কাজের নিকটবর্তী হতেও নিষেধ করেছেন (আনআম ১৫৩) দ্বিতীয়তঃ তার দিকে পুরুষের কুদৃষ্টি পড়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে এতদ্ব্যতীত তার স্বাস্থ্যগত এবং অন্যান্য ক্ষতির সমূহ আশংকা থাকেযেহেতু ইসলাম নারীকে গৃহে অবস্থান করার নির্দেশ দিয়েছে এবং জাহেলী যুগের ন্যায় নিজেদের সৌন্দর্যকে বাইরে প্রদর্শন করে বেড়াতে নিষেধ করেছে (আহযাব ৩৩), সেহেতু গৃহের দায়িত্ব পালন ও প্রয়োজনে সেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করাই তাদের জন্য নিরাপদযদিও প্রয়োজনে পর্দার সাথে তাদের বাইরে যাওয়া জায়েয রয়েছে, যা বিভিন্ন হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত (আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৩২৫১ প্রভৃতি)
প্রশ্ন : কারো কাছে ঈমানদার জিন থাকলে তার নিকটে অতীত বা ভবিষ্যতের কথা জানতে চাওয়া যাবে কি?
-আব্দুর রহমান, বড়বন্দর, দিনাজপুর
উত্তর : কোন জিন বা মানুষের পক্ষে অতীত বা ভবিষ্যতের খবর জানা সম্ভব নয়এসব খবর সম্পর্কে অবহিত দাবীকারী মিথ্যাবাদী বৈ কিছুই নয়কেননা তা গায়েবের খবরযা কেবলমাত্র আল্লাহই জানেন (নামল ১৭/৬৫, আনআম ৬/৫৯)কোন ঈমানদার জিন বা মানুষ এসব জানার দাবী করতে পারে নাআর কারো নিকটে এসব জানতে চাওয়াও হারাম (আবুদাঊদ হা/৩৯০৪; মিশকাত হা/৪৫৯৯)এমনকি যদি কেউ গণককে এ বিষয়ে কিছু জিজ্ঞাসাও করে, তাহলে তার চল্লিশ দিনের ছালাত কবুল হবে না(মুসলিম, মিশকাত হা/৪৫৯৫)
প্রশ্ন : মক্কা ও মদীনায় মাসব্যাপী রামাযানের ছিয়াম পালন করার বিশেষ কোন ফযীলত আছে কি?
-ফাইয়ায মোর্শেদ, ঢাকা
উত্তর : মক্কা ও মদীনায় ছিয়াম পালনের বিশেষ কোন ফযীলত নেইএ মর্মে যা বর্ণিত আছে, তার সবগুলোই যঈফ ও জাল(ইবনু মাজাহ হা/৩১১৭; যঈফুল জামেহা/৩৫২২, ৫৩৫৫, ৩১৩৯; যঈফাহ হা/৮৩১, ৮৩২; যঈফ তারগীব হা/৫৮৫)
প্রশ্ন : বিবাহের পূর্বে পাত্রী দেখার ক্ষেত্রে পাত্র পক্ষ থেকে কোন কোন পুরুষের জন্য পাত্রী দেখার অনুমোদন রয়েছে?
-আবুবকর ছিদ্দীক, হারাগাছ, রংপুর
উত্তর : বিবাহের উদ্দেশ্যে মেয়ের অভিভাবকের সম্মতিক্রমে কেবলমাত্র পাত্র তার প্রস্তাবিত পাত্রীকে দেখতে পারেপাত্র ব্যতীত কোন গায়ের মাহরাম পুরুষ পাত্রী দেখতে পারবে নাতবে পরিবেশ বা আনুসঙ্গিক বিষয় সমূহ দেখার জন্য অভিভাবকগণ খোঁজ-খবর নিতে পারবেনআবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলল, আমি আনছারদের এক মেয়েকে বিবাহ করতে ইচ্ছুকতিনি বললেন, তুমি তাকে প্রথমে দেখে নাওকারণ আনছার মহিলাদের চোখে দোষ থাকে (মুসলিম হা/১৪২৪, মিশকাত হা/৩০৯৮বিবাহঅধ্যায়)রাসূল (ছাঃ) বলেন,তোমরা বিবাহের জন্য উপযুক্ত পাত্রী নির্বাচন কর (ইবনু মাজাহ হা/১৯৬৮; ছহীহাহ হা/১০৬৭)তিনি আরো বলেন, যখন তোমাদের কেউ কোন পাত্রীকে প্রস্তাব দিবে সম্ভব হলে সে যেন পাত্রীকে দেখেযা বিবাহের জন্য সহায়ক হবে (আবুদাউদ হা/২০৮২; মিশকাত হা/৩১০৬; ছহীহাহ হা/৯৯)অন্য বর্ণনায় রয়েছে, রাসূল (ছাঃ) বলেন, পাত্রী দর্শনে পরস্পরে মহববত সৃষ্টি হয়(ইবনু মাজাহ হা/১৮৬৫; মিশকাত হা/৩১০৭; ছহীহাহ হা/৯৬)
স্মর্তব্য যে, বিবাহের পর স্ত্রীকে স্বামীর ভাই, চাচা, মামা, ভগ্নিপতি সহ অন্যান্য গায়ের মাহরাম পুরুষ থেকে অবশ্যই পর্দা করতে হবে (নূর ২৪/৩১; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩১০২)
প্রশ্ন : কারো বিরুদ্ধে বদদোআ করা জায়েয কি
-মোতালেব হোসেন,
কুলাঘাট, লালমণিরহাট
উত্তর : কোন মানুষের বিরুদ্ধে বদদোআ করা মুমিনের স্বভাব নয় আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘মুমিন ব্যক্তি ঠাট্টা-বিদ্রূপকারী, র্সনাকারী, লানতকারী, অশ্লীলভাষী ও বদ-স্বভাবের হতে পারে না(তিরমিযী হা/১৯৭৭, মিশকাত হা/৪৮৪৭)তিনি বলেন, আমি লানতকারী হিসাবে প্রেরিত হইনিবরং রহমত হিসাবে প্রেরিত হয়েছি(মুসলিম, মিশকাত হা/৫৮১২)এছাড়া তিনি ব্যক্তি স্বার্থে কখনো কারো প্রতিশোধ নিতেন না (বুখারী হা/৩৫৬০) তবে দ্বীনী ও জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে বদদোআর আশ্রয় নেওয়ায় কোন বাধা নেইইরানের বাদশাহ পারভেয কর্তৃক ইসলামের দাওয়াত সম্বলিত রাসূল (ছাঃ) প্রেরিত পত্র ছিঁড়ে ফেলার খবর শুনে তিনি তার বিরুদ্ধে বদদো করেছিলেন (আহমাদ হা/১৫৬৯৩; ছহীহাহ হা/১৪২৯)৭০ জন ছাহাবীকে প্রতারণার মাধ্যমে হত্যাকারী রেল ও যাকওয়ান গোত্রের বিরুদ্ধে বদদোআ করে তিনি একমাস যাব কুনূতে নাযেলাহ পাঠ করেছেন (বুখারী হা/২৮০১)
প্রশ্ন  : জুমআর দিন সর্বাগ্রে মসজিদে প্রবেশের ফযীলত সম্পর্কে জানতে চাই
-মুস্তাক্বীম আহমাদ, মান্দা, নওগাঁ
উত্তর :এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমআর দিন গোসল করে সুগন্ধি মেখে মসজিদে এল ও সাধ্যমত নফল ছালাত আদায় করলঅতঃপর চুপচাপ ইমামের খুবা শ্রবণ করল ও জামাআতে ছালাত আদায় করল, তার পরবর্তী জুমআ পর্যন্ত এবং আরও তিনদিনের গোনাহ মাফ করা হয়(বুখারী হা/৮৮৩; মিশকাত হা/১৩৮১)তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমআর দিন ভালভাবে গোসল করে অতঃপর সকাল সকাল পায়ে হেঁটে মসজিদে যায় এবং (আগে ভাগে নফল ছালাত শেষে) ইমামের কাছাকাছি বসে ও মনোযোগ দিয়ে খুবার শুরু থেকে শুনে এবং অনর্থক কিছু করে না, তার প্রতি পদক্ষেপে এক বছরের ছিয়াম ও ক্বিয়ামের অর্থা দিনের ছিয়াম ও রাতের বেলায় নফল ছালাতের সমান নেকী হয়(আহমাদ হা/১৬২১৭; তিরমিযী হা/৪৯৬; মিশকাত হা/১৩৮৮) তিনি আরও বলেন, ‘জুমআর দিন ফেরেশতাগণ মসজিদের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকেন ও মুছল্লীদের নেকী লিখতে থাকেনএদিন সকাল সকাল যারা আসে, তারা উট কুরবানীর সমান নেকী পায়তার পরবর্তীগণ গরু কুরবানীর, তার পরবর্তীগণ ছাগল কুরবানীর, তার পরবর্তীগণ মুরগী কুরবানীর ও তার পরবর্তীগণ ডিম ছাদাক্বার সমান নেকী পায়অতঃপর খত্বীব দাঁড়িয়ে গেলে ফেরেশতাগণ দফতর গুটিয়ে ফেলেন ও খুবা শুনতে থাকেন (বুখারী হা/৮৮১, ৯২৯মুসলিম হা/৮৫০; মিশকাত হা/১৩৮৪)
প্রশ্ন  : মসজিদ কর্তৃপক্ষ শুদ্ধভাবে আযান ও ইক্বামত দেওয়ার লোক থাকা সত্ত্বেও অশুদ্ধ উচ্চারণকারী ব্যক্তিকে দিয়ে একাজ করিয়ে থাকেএক্ষণে এর জন্য কর্তৃপক্ষের পরণতি কি হবে?
-যাকারিয়া খান, কুমিল্লা
উত্তর : মসজিদের জন্য ক্ষতিকর কোন কারণ না থাকলে এর জন্য মসজিদের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ গুনাহগার হবেরাসূলুল্লাহ (ছাঃ)  বলেনসাবধান! তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীলআর (ক্বিয়ামতের দিন) তোমরা প্রত্যেকে স্ব স্ব দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩৬৮৫) তবে মুছল্লীর ছালাতে কোন ক্ষতি হবে নারাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘ইমামগণ তোমাদের ছালাতে নেতৃত্ব দিয়ে থাকেনএক্ষণে তারা সঠিকভাবে ছালাত আদায় করালে তোমাদের জন্য নেকী রয়েছেআর তারা ভুল করলে তোমাদের জন্য রয়েছে নেকী, কিন্তু তাদের জন্য রয়েছে গোনাহ(বুখারী হা/৬৯৪; মিশকাত হা/১১৩৩)
প্রশ্ন  : ডান হাতে তাসবীহ গণনার সময় ডান দিকের আঙ্গুল দিয়ে শুরু করতে হবে কি?
-শরীফ হোসাইন, রাজশাহী
উত্তর : ডান হাতের কনিষ্ঠ আঙ্গুল থেকে তাসবীহ গণনা করতে হবেরাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ডান হাতে তাসবীহ গণনা করতেন (আবুদাঊদ হা/১৫০২; সিলসিলা যঈফাহ হা/৮৩-এর আলোচনা)তিনি সকল কাজ ডান দিক থেকে শুরু করতে পসন্দ করতেন (মুত্তাফাক্বআলাইহ, মিশকাত হা/৪০০) ঝুলন্ত হাতের স্বাভাবিক অবস্থা হল উপুড় থাকাঅতঃপর স্বাভাবিক গণনা হ ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে কড়ে আঙুলের গোড়া থেকে গণনা শুরু করাঅতএব তাসবীহ গণনা সেভাবেই হবে
প্রশ্ন : সূরা ইউসুফের ১০৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যা জানতে চাই
-হারূনুর রশীদ, পলাশবাড়ী, গাইবান্ধা
উত্তর : আয়াতটির অর্থ হ, তাদের অধিকাংশ আল্লাহকে বিশ্বাস করেঅথচ সেই সাথে শিরক করে(ইউসুফ ১২/১০৬) এর ব্যাখ্যা হ, পৃথিবীতে অধিকাংশ মানুষই সৃষ্টিকর্তা হিসাবে আল্লাহকে বিশ্বাস করেকিন্তু সেই সাথে অন্যকে শরীক করেযেমন মক্কার মুশরিকরা আল্লাহকে বিশ্বাস করতআসমান-যমীন, পাহাড়-পর্বত সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা হিসাবে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রাখতনবী ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে বিশ্বাস করতআখেরাতে বিশ্বাস পোষণ করতহজ্জ ও ওমরাহ করতনিজেদের নাম আব্দুল্লাহ, আব্দুল মুত্তালিব রাখতঅথচ আল্লাহর সাথে তারা অন্যকে শরীক করত ও তাদের সুফারিশের অসীলায় আল্লাহর কাছে মুক্তি চাইতযেমন তারা কাবা গৃহ ত্বাওয়াফকালে শিরকী তালবিয়াহ পাঠ করতযেমন তারা বলত, লাববাইকা লা শারীকা লাকা, ইল্লা শারীকান হুয়া লাক; তামলিকুহু ওয়া মা মালাক (আমি হাযির; তোমার কোন শরীক নেই, কেবল ঐ শরীক যা তোমার জন্য রয়েছেতুমি যার মালিক এবং যা কিছুর সে মালিক) (মুসলিম হা/১১৮৫; মিশকাত হা/২৫৫৪ ইহরাম ও তালবিয়াহঅনুচ্ছেদ; ইবনু কাছীর, ত্বাবারী, ঐ আয়াতের তাফসীর) বস্ত্ততঃ বিগত যুগের ন্যায় বর্তমান যুগেও অধিকাংশ মুসলমান শিরকী আক্বীদা ও আমলে অভ্যস্তঅতএব এসব থেকে তওবা করে খাঁটি মুসলিম হওয়াই কর্তব্য
প্রশ্ন  : টিকটিকি ও এ জাতীয় প্রাণীর মল কাপড়ে লেগে গেলে উক্ত কাপড়ে ছালাত আদায় করা যাবে কি?
-সা, পাটুল, নাটোর
উত্তর : টিকটিকি একটি কষ্টদানকারী ও বিষাক্ত প্রাণীরাসূল (ছাঃ) একে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪১১৯)এটি খাওয়া হারামকেননা আল্লাহ বলেন, তিনি তাদের জন্য পবিত্র বিষয় সমূহ হালাল করেছেন ও অপবিত্র বিষয় সমূহ নিষিদ্ধ করেছেন(রাফ ৭/১৫৭)যেটা খাওয়া হারাম, তার মলমূত্রও হারামঅতএব তা কাপড়ে লেগে গেলে, তা পরিষ্কার করে ছালাত আদায় করতে হবে
প্রশ্ন  : সঊদী আরব সহ মধ্যপ্রাচ্যে প্রচলিত রাজতন্ত্র শরীআতসম্মত কি?
-উম্মে আত্বিয়া, কাঞ্চন, রূপগঞ্জ
উত্তর : সঊদী রাজতন্ত্র শরীআতসম্মত ইসলামে রাজতন্ত্র আদৌ নিষিদ্ধ নয়, যদি না তা কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী পরিচালিত হয়সঊদী রাজতন্ত্রে আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করা হয় এবং তা কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী পরিচালিত হয়যেমন সঊদী সংবিধানের ৭নং ধারায় বলা হয়েছে, يسةمد الحكم في المملكة العربية السعودية سلطةه من كةاب الله ةعالى وسنة رسوله. وهما الحاكمان على هذا النظام وجميع أنظمة الدولة (সঊদী রাজতন্ত্রের সর্বত্র আল্লাহর কিতাব ও তার রাসূলের সুন্নাহর কর্তৃত্ব জারী থাকবে)৮নং ধারায় বলা  হয়েছে, يقوم الحكم في المملكة العربية السعودية على أساس العدل والشورى والمساواة وفق الشريعة الإسلامية (সঊদী রাজতন্ত্রের বিধানসমূহ প্রতিষ্ঠিত হবে ইসলামী শরীআতের অনুকূলে ন্যায়পরায়ণতা, পরামর্শ ও সমতাবিধানের ভিত্তির উপরে)
অতএব শাসক যদি আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করেন এবং ইসলামী শরীআত অনুযায়ী রাজ্যশাসন করেন, তাহলে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি তার অনুকূলেউক্ত নীতির অনুসরণে কোন শাসক যদি পরবর্তী শাসক হিসাবে তার পরিবার থেকে যোগ্য কাউকে বা অন্য কারু ব্যাপারে অছিয়ত করে যান, তাতে কোন বাঁধা নেইযেমন আবুবকর (রাঃ) মৃত্যুকালীন সময়ে বিশিষ্ট ছাহাবীগণের সাথে পরামর্শক্রমে পরবর্তী খলীফা হিসাবে ওমর (রাঃ)-কে নির্বাচন করেন (তারীখে ত্বাবারী ২/৩৫২-৩৫৩; ইবনু সা, তাবাক্বাতুল কুবরা ৩/১৯৯-২০০) শাসক পরিবার থেকে কেউ পরবর্তী শাসক হতে পারবে না, এরূপ কোন নিষেধাজ্ঞা শরীআতে নেইএক্ষণে শাসক যদি অযোগ্য কারো ব্যাপারে অছিয়ত করে থাকেন, তার জন্য তিনিই দায়ী হবেনকেননা অযোগ্য লোককে ক্ষমতাসীন করাকে রাসূল (ছাঃ) ক্বিয়ামতের আলামত হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন (বুখারী হা/৫৯, মিশকাত হা/৫৪৩৯) অতএব মৌলিকভাবে সঊদী রাজতন্ত্র শরীআতবিরোধী গণ্য করার কোন সুযোগ নেই
পক্ষান্তরে পশ্চিমা গণতন্ত্রের মৌলিক ভিত্তিই হ ধর্মনিরপেক্ষতাযেখানে মানুষ হল সার্বভৌম ক্ষমতার মালিকআর আইন রচনার ভিত্তি হ, মানুষের মনগড়া সিদ্ধান্ত এভাবে ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ প্রথমে মুসলমানকে ঈমানের গন্ডীমুক্ত করেঅতঃপর গণতন্ত্র তাকে মানুষের গোলাম বানায়অতঃপর সে আল্লাহর সন্তুষ্টি বাদ দিয়ে ভোটারের মনস্ত্তষ্টিকে অগ্রাধিকার দেয়যা তাকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ ব্যতীত কারু বিধান দেবার ক্ষমতা নেই(ইউসুফ ১২/৪০)তিনি বলেন, যদি তুমি জনপদের অধিকাংশ লোকের কথা মেনে চল, তাহলে ওরা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবেতারা তো কেবল ধারণার অনুসরণ করে এবং তারা তো কেবল অনুমান ভিত্তিক কথা বলে(আনআম ৬/১১৬) 
একইভাবে গণতন্ত্র সমাজের প্রত্যেককে ক্ষমতালোভী করে তোলেঅথচ ক্ষমতা চেয়ে নেওয়া শরীআতে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩৬৮০, ৩৬৮৩)
প্রশ্ন : ইবরাহীম বিন আদহাম (রহঃ)-কে ছিলেন? বিস্তারিত জানতে চাই
-ইমাম হুসাইন, সাপাহার, নওগাঁ
উত্তর : ইবরাহীম বিন আদহাম একজন প্রখ্যাত তাবেঈ ছিলেনতিনি হিজরী প্রথম শতাব্দীর শেষের দিকে খোরাসানের বালখ নগরীতে মতান্তরে মক্কায় জন্মগ্রহণ করেনতাঁর পিতা খোরাসানের অন্যতম শাসক ও সম্পদশালী ব্যক্তি ছিলেনতিনি জ্ঞান অন্বেষণ ও হালাল রিযিকের সন্ধানে প্রথমে ইরাক ও পরে শামের দামেশকে গমন করেন (হিলইয়াতুল আউলিয়া ৭/৩৬৭; সিয়ারু আলামিন নুবালা ৭/৩৮৭-৩৮৮) তিনি বহু সংখ্যক হাদীছ বর্ণনা করেছেনইমাম নাসাঈ (রহঃ) বলেন, তিনি একজন বিশ্বস্ত রাবী ও দুনিয়া বিরাগী ব্যক্তি ছিলেনইমাম দারাকুনী বলেন, তার থেকে বিশ্বস্ত রাবী বর্ণনা করলে হাদীছ ছহীহ হবে (তারীখুল কাবীর হা/৮৭৭, ১/২৭৩; তাহযীবুল কামাল ২/২৭; আল-বিদায়াহ ১০/১৩৫-১৪৪) তিনি ১৬২ হিজরীতে দামেশকে মৃত্যুবরণ করেন (আল-বিদায়াহ ১০/১৪৪)
উল্লেখ্য যে, ইবরাহীম বিন আদহাম সম্পর্কে খিযির (আঃ)-এর সাথে সাক্ষাতের ঘটনা, ইলিয়াস (আঃ) কর্তৃক ইসমে আযম শিক্ষা দেওয়া, আল্লাহর গায়েবী শব্দ শোনা ইত্যাদি ঘটনা বিভিন্ন কিতাবে বর্ণিত আছে, তা ঠিক নয় (আল-বিদায়াহ ১০/১৩৫-১৪৪)
প্রশ্ন : আলক্বামা-এর মৃত্যুকালীন প্রচলিত ঘটনাটির সত্যতা আছে কি?   
-নূরুল আমীন, সাপাহার, নওগাঁ
উত্তর : প্রশ্নে উল্লেখিত আলক্বামা নামটি কপোলকল্পিতএ মর্মে প্রচলিত ঘটনাটিও জালএক্ষণে কথিত ঘটনাটি হল- জনৈক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে এসে বলল, এখানে একটি ক্রীতদাস আছে, যার মৃত্যু আসন্নতাকে কালেমা পড়তে বলা হলে সে বলল, আমি পড়তে সক্ষম হচ্ছি না তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, সেকি জীবিত অবস্থায় কালেমা পড়েনি? তারা বলল, পড়েছেতিনি বললেন, তাহলে তাকে কিসে কালেমা পড়তে বাধা দিচ্ছে? একথা বলে তিনি তার বাড়িতে চলে গেলেনতিনি তাকে বললেন, হে গোলাম! তুমি কালেমা পড় সে বলল, আমি পড়তে পারছি না তিনি বললেন, কেন? সে বলল, মায়ের প্রতি অবাধ্যতার কারণেতিনি বললেন, তিনি কি বেঁচে আছেন? সে বলল, হ্যাঁতখন রাসূল (ছাঃ) তাকে ডেকে পাঠালেনতিনি আসলে রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, এটি তোমার ছেলে? তিনি বললেন, হ্যাঁতখন তিনি মাকে ডেকে এনে বললেন, মনে কর এখানে আগুন জ্বালানো অতঃপর তোমাকে বলা হল- তুমি যদি তোমার ছেলেকে ক্ষমা না কর, তাহলে তাকে আগুনে নিক্ষেপ করা হবেতুমি কি করবে? মা বললেন, তাহলে আমি তাকে ক্ষমা করে দিবরাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, তুমি আল্লাহকে এবং আমাদেরকে সাক্ষী রেখে বল যে, তুমি তার প্রতি খুশীসে বলল, আমি ছেলের প্রতি খুশীতিনি বললেন, হে যুবক! তুমি এবার কালেমা পাঠ করসে কালেমা পাঠ করলরাসূল (ছাঃ) বললেন, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি তাকে আগুন থেকে রক্ষা করলেন(আহমাদ হা/১৯৪৩০; বায়হাক্বী, শুআবুল ঈমান হা/৭৮৯২; আলবানী, সিলসিলা যঈফাহ হা/৩১৮৩)
প্রশ্ন  : দুই সিজদার মধ্যে দোআ পাঠ করার সময় অনেকে শাহাদাত অঙ্গুলী দ্বারা ইশারা করেনএ ব্যাপারে কোন দলীল আছে কি?
- আহসানুল হক, মুজীবনগর, মেহেরপুর
উত্তর : এব্যাপারে বর্ণিত হাদীছটি শায(আলবানী, তামামুল মিন্নাহ ১/২১৪; ছহীহাহ হা/২২৪৭-এর আলোচনা দ্রঃ)অতএব তা আমলযোগ্য নয়
প্রশ্ন  : ফরয ছিয়ামরত অবস্থায় ইচ্ছাকৃত পানাহার করলে তার জন্য কাফফারা কি হবে?
-আব্দুল ক্বাইয়ূম, চট্রগ্রাম
উত্তর : উক্ত অবস্থায় সে ক্বাযা আদায় করবেকেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, ছিয়াম অবস্থায় যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করে, সে যেন তার ক্বাযা আদায় করে(তিরমিযী হা/৭২০, মিশকাত হা/২০০৭, সনদ ছহীহ; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/৪২৬-২৭)
প্রশ্ন : ইসলামী বিধান মতে কসাইয়ের কাজ জায়েয কি? গোশতের ছিটেফোঁটা ও রক্ত শরীরে বা কাপড়ে লাগলে ছালাত জায়েয হবে কি?
-আব্দুল ক্বাইয়ূম সরদার, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ
উত্তর : ইসলামী বিধান মতে কসাইয়ের কাজ জায়েযরাসূল (ছাঃ)-এর যুগে অনেক ছাহাবী কসাইয়ের কাজ করতেন (বুখারী হা/১৭১৭) আর গোশতের ছিটেফোঁটা বা রক্ত কাপড়ে লাগলে তাতে ছালাত জায়েয হবেআল্লাহ তাআলা রক্ত খাওয়া হারাম করেছেন; কিন্তু রক্তকে অপবিত্র বলেননিসে কারণ আলবানী (রহঃ) বলেন, ‘ইস্তেহাযার রক্ত ব্যতীত কম হৌক বা বেশী হৌক অন্য কোন রক্ত প্রবাহের কারণে ওযূ ভঙ্গ হওয়ার কোন ছহীহ দলীল নেই(তাহকীক মিশকাত হা/৩৩৩-এর টীকা দ্রষ্টব্য)
প্রশ্ন : স্বামী মারা যাওয়ার পর সরকারী বিধি অনুযায়ী স্ত্রী যতদিন বাঁচবে পেনশন পাবেকিন্তু ইসলামী নীতি অনুযায়ী ছেলে-মেয়েরাও পিতার সম্পদের হকদার হিসাবে উক্ত পেনশনের হকদারএক্ষণে সন্তানদের মাঝে উক্ত পেনশন শরীআত মোতাবেক ভাগ করে দেওয়া মাতার জন্য আবশ্যক হবে কি?
-আযাদ সরকার, গঙ্গাচড়া, রংপুর
উত্তর : একজন সরকারী চাকুরীজীবি সরকারী বিধি মেনে নেওয়ার অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েই চাকুরী গ্রহণ করেআর সরকারী বিধি মতে তার মৃত্যুর পরে পেনশনের মালিক হবে তার স্ত্রীতাই সে তার জীবদ্দশাতেই তার স্ত্রীকে পেনশনের টাকার মালিক হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে অতএব উক্ত পেনশনের টাকা মাতার জীবদ্দশায় সন্তানদের মধ্যে বণ্টন করতে হবে না
প্রশ্ন  : প্রতি হাযারে একজন জান্নাতে যাবে মর্মে বর্ণিত হাদীছটির ব্যাখ্যা জানতে চাই
-মুনীর হোসাইন, কাযীরহাট, বরিশাল
উত্তর : হাদীছটির ব্যাখ্যা হাদীছের মধ্যেই রয়েছেআবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা ক্বিয়ামতের দিন ডাক দিয়ে বলবেন হে আদম! নিশ্চয়ই আল্লাহ আপনাকে আদেশ করেন যে, আপনি আপনার সন্তানদের মধ্য হতে জাহান্নামীদের বের করে দেনআদম বলবেন, হে আমার প্রতিপালক! কতজন জাহান্নামী? আল্লাহ বলবেন প্রতি হাযারে ৯৯৯ জন।... এ বক্তব্য লোকদের জন্য খুবই কঠিন হএমনকি তাদের চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেলতখন নবী করীম (ছাঃ) বললেন, দেখ ইয়াজূজ-মাজূজ সম্প্রদায় থেকে হবে ৯৯৯ জনআর তোমাদের মধ্য থেকে হবে ১ জনতারপর বললেন, মানুষের মধ্য হতে তোমাদের সংখ্যার তুলনা হবে একটি সাদা গরুর পশমসমূহের মধ্যে একটি কালো পশম অথবা একটি কালো গরুর পশমসমূহের মধ্যে একটি সাদা পশমের মত
অতঃপর রাসূল (ছাঃ) বললেন, ঐ সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার জীবন! আমি আশা করি যে তোমরা জান্নাতীদের এক-চতুর্থাংশ হবেআবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, আমরা একথা শুনে আল্লাহ আকবারবললামঅতঃপর তিনি বললেন, আমি আশা করি তোমরা জান্নাতীদের অর্ধেক হবেআমরা আবারোআল্লাহু আকবারবললামআর অবশ্যই আমি আশা রাখি যে, তোমরা জান্নাতীদের চার ভাগের তিন ভাগ হবেতখন আমরা আল্লাহু আকবারবললাম (বুখারী হা/৪৭৪১; মিশকাত হা/৫৫৪১ হাশরঅনুচ্ছেদ) সুতরাং জাহান্নামীদের মধ্যে প্রতি হাযারে ৯৯৯ জন ইয়াজূজ-মাজূজ সম্প্রদায়ের হবে এবং উম্মতে মুহাম্মাদী জান্নাতের তিন চতুর্থাংশ হবে আল্লাহ আমাদের সকলকে জান্নাতুল ফেরদাউস লাভের তাওফীক দান করুন-আমীন
প্রশ্ন : পরিবারে পর্দা রক্ষার স্বার্থে পৃথক বাড়ি বানাতে চাইকিন্তু পিতা-মাতা রাযী হচ্ছেন নাএক্ষণে আমার আমার করণীয় কি?
-মাসঊদ রানা, ব্রাহ্মণগাঁও, গাযীপুর
উত্তর : পর্দা এবং পিতা-মাতার আনুগত্য উভয়টিই অতি গুরুত্বপূর্ণঅন্যদিকে যে তিন শ্রেণীর লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে না, তাদের মধ্যে অন্যতম হল পিতা-মাতার অবাধ্য ব্যক্তি ও দাইয়ূছ তথা স্ত্রীর বেহায়াপনার ব্যাপারে উদাসীন পুরুষ (নাসাঈ হা/২৫৬২, ছহীহাহ হা/৬৭৪) তাই এক্ষেত্রে শরীআতের পর্দার গুরুত্বের বিষয়টি পিতা-মাতাকে বুঝাতে হবে এবং সেখানেই পর্দার ব্যবস্থাপনা মযবূত করার সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে কোনভাবেই সম্ভব না হলে তাদের প্রতি সদাচরণ এবং তাদেরকে সাধ্যপক্ষে সন্তুষ্ট রেখে পর্দার সুবিধা সম্বলিত পৃথক গৃহে স্থানান্তরিত হতে হবে কেননা পিতা-মাতা শরীআতবিরোধী কোন কাজে চাপ দিলে তা মানা যাবে না (লোকমান ৩১/১৫)
প্রশ্ন : কেউ মৃত্যুবরণ করলে তার পরিবারের সদস্যদের জন্য ৪০ দিন যাব গৃহ ত্যাগ করা যাবে না বলে শরীআতে কোন নির্দেশনা আছে কি?
-মাহমূদ, মীরপুর, ঢাকা
উত্তর : এরূপ কোন নির্দেশনা নেইএগুলি কুসংস্কারের অন্তর্ভুক্তবরং স্বামী মারা গেলে কেবল স্ত্রী স্বামীর বাড়ীতে মাস ১০ দিন শোক পালন করবে (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩৩৩০-৩২, ৩৩৩৪)এসময় একান্ত প্রয়োজন ব্যতীত বাড়ীর বাইরে যাবে না এবং কোন সাজ-সজ্জা করবে না (ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূফাতাওয়া ৩৪/২৭-২৮)
প্রশ্ন : জিবরীল (আঃ)-এর নিজস্ব আকৃতির ব্যাপারে কিছু জানা যায় কি? রাসূল (ছাঃ) এবং ছাহাবায়ে কেরামের সামনে কোন আকৃতিতে তিনি আগমন করতেন?
-ইহসান আলী, ভোলাহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
উত্তর : রাসূল (ছাঃ) জিবরীল (আঃ)-কে স্বরূপে দেখেছেন দুবার (মুসলিম হা/১৭৭) প্রথমবার দেখেন মিরাজের পূর্বে মক্কার বাত্বহা উপত্যকায় ৬০০ ডানা বিশিষ্ট বিশাল অবয়বেযাতে আসমান-যমীনের মধ্যবর্তী দিগন্ত বেষ্টিত হয়ে পড়ে (নাজম ৫৩/৫-১০, তাকভীর ৮১/২৩; তিরমিযী হা/৩২৭৮, ৩২৮৩; মিশকাত হা/৫৬৬১-৬২;)দ্বিতীয়বার দেখেন মিরাজ রজনীতে (নাজম  ৫৩/১৩-১৬, আলোচনা দ্রঃ  ইবনু কাছীর, ঐ আয়াতের তাফসীর)
তিনি কখনো মানুষের রূপ ধারণ করে, আর কখনো স্বরূপেযেমন প্রথম অহীনাযিলের দিন হেরা গুহাতে তিনি মানুষের রূপ ধারণ করে এসেছিলেন (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫৮৪১)একবার রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের সামনে দেহ্ইয়া কাল্বীর রূপ ধারণ করে এসেছেন (বুখারী হা/৫০; মুসলিম হা/৮; নাসাঈ হা/৪৯৯১)আরেকবার রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে পাশাপাশি বসা অবস্থায় আয়েশা (রাঃ) তাদেরকে দেখে সালাম প্রদান করেন (আহমাদ হা/২৩৭২৭, সনদ ছহীহ)এছাড়া তিনি মারিয়াম (আঃ)-এর সামনে সুঠামদেহী একজন যুবকের রূপ ধারণ করে এসেছিলেন (মারিয়াম ১৯/১৭)
প্রশ্ন : স্কুল-কলেজে বোর্ড পরীক্ষার বিদায় অনুষ্ঠান উপলক্ষে নাচ-গান, ছাত্র-ছাত্রীদের মাল্যদান ও ছবি তোলা ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার শরীআতবিরোধী কার্যকলাপ হয়ে থাকেএসব অনুষ্ঠানে যোগদান করা যাবে কি?
-ডা. মুহসিন, বাগমারা, রাজশাহী
উত্তর : জাতীয় শরীআতবিরোধী অনুষ্ঠানে যোগদান করা বা আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ (মায়েদাহ ২)
 
প্রশ্ন : ফরয ছালাতের আগের সুন্নাতগুলো পরে এবং পরের গুলো আগে আদায় করা যাবে কি?
-নাজমুল ইসলাম, পীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও
উত্তর : ওযর বশতঃ ফরয ছালাতের আগের সুন্নাতগুলো পরে আদায় করা যায়ব্যস্ততার কারণে রাসূল (ছাঃ) একদা যোহরের পূর্বের সুন্নাত আছরের পরে আদায় করেছিলেন (বুখারী হা/১২৩৩; মিশকাত হা/১০৪৩)আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যোহরের পূর্বে চার রাকআত সুন্নাত আদায় করতে না পারলে পরে তা আদায় করে নিতেন(তিরমিযী হা/৪২৬, সনদ হাসান)এরূপভাবে জনৈক ছাহাবীকে ফজরের পূর্বের সুন্নাত পরে আদায় করতে দেখে তিনি মৌন সম্মতি দিয়েছেন (ইবনু মাজাহ হা/১১৫৪; আবুদাউদ হা/১২৬৭, সনদ ছহীহ)তবে পরের সুন্নাত আগে পড়ার কোন বিধান নেই
প্রশ্ন : দাফনের প্রাক্কালে নারী বা পুরুষ মাইয়েতের বুকের উপর নিজের হাত রেখে ইমাম ছাহেব বিসমিল্লাহি ওয়া আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহবলবেন বিধানের কোন সত্যতা আছে কি?
-আলী হোসাইন, সাহেব বাজার মাছপট্টি, রাজশাহী
উত্তর : বিধানের কোন ভিত্তি নেইবরং মাইয়েতকে কবরে রাখার সময় উপস্থিত সকলে বিসমিললা-হি ওয়া আলা মিল্লাতে রাসূলিল্লাহঅথবা ওয়া আলা সুন্নাতে রাসূলিল্লাহদোআটি পাঠ করবে (ইবনু মাজাহ হা/১৫৫০; আহমাদ হা/৪৯৯০)

1 comment:

  1. দুই হাতে মুসাফাহা বিদয়াত বললেন অথচ হাদিস আছে

    ReplyDelete