প্রশ্নঃ ইসলাম কাকে বলে ?
আব্দুর রহমান
উত্তরঃ আল্লাহর একত্ববাদকে মেনে নিয়ে পরিপূর্ণভাবে তার আনুগত্য করা এবং শির্ক ও শিরকপন্থীদের থেকে সর্ম্পক ছিন্ন করাকেই ইসলাম বলে।
উত্তরঃ আল্লাহর একত্ববাদকে মেনে নিয়ে পরিপূর্ণভাবে তার আনুগত্য করা এবং শির্ক ও শিরকপন্থীদের থেকে সর্ম্পক ছিন্ন করাকেই ইসলাম বলে।
প্রশ্ন : চার বা তিন রাক‘আত বিশিষ্ট ছালাতের প্রথম তাশাহহুদে দরূদে ইবরাহীমী পাঠ করা যাবে কি ?
-গোলাম রহমান
উত্তর : তিন বা চার রাক‘আত বিশিষ্ট ছালাতের প্রথম বৈঠকে কেবল তাশাহহুদ পড়াই যথেষ্ট। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, আমাদের উপর তাশাহহুদ ফরয হওয়ার পূর্বে আমরা বলতাম, ‘আসসালামু ‘আলাল্লাহি মিন ইবাদিহী’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদেরকে বললেন, তোমরা এটা না বলে বরং ‘আত্ত্বাহিইয়াতু... বল’ (নাসাঈ হা/১১৬৮, ইরওয়া হা/৩১৯)।
-গোলাম রহমান
উত্তর : তিন বা চার রাক‘আত বিশিষ্ট ছালাতের প্রথম বৈঠকে কেবল তাশাহহুদ পড়াই যথেষ্ট। ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, আমাদের উপর তাশাহহুদ ফরয হওয়ার পূর্বে আমরা বলতাম, ‘আসসালামু ‘আলাল্লাহি মিন ইবাদিহী’। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদেরকে বললেন, তোমরা এটা না বলে বরং ‘আত্ত্বাহিইয়াতু... বল’ (নাসাঈ হা/১১৬৮, ইরওয়া হা/৩১৯)।
প্রথম বৈঠকে তাশহ্হুদের পরে দরূদ পাঠ না করার বিষয়টি বিভিন্ন হাদীছ দ্বারা বুঝা যায়। যেমন (১) ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন যে, তাঁকে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) তাশাহ্হুদ শিক্ষা দেন। ... অতঃপর তিনি ছালাতের মধ্যখানে হ’লে তাশাহ্হুদ পড়েই উঠে যেতেন। আর শেষ বৈঠক হ’লে তাশাহ্হুদের পরে ইচ্ছামত দো‘আ করতেন। অতঃপর সালাম ফিরাতেন’ (আহমাদ হা/৪৩৮২, ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/৭০৮, সনদ হাসান)।(২) আবুবকর (রাঃ) যখন প্রথম বৈঠকে বসতেন, তখন তিনি যেন গরম পাথরের উপরে বসতেন’ (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩০৩৪, সনদ ছহীহ, ইবনু হাজার, তালখীছুল হাবীর হা/৪০৬)। (৩) ইবনু ওমর থেকেও অনুরূপ বর্ণনা এসেছে (ইবনু আবী শায়বাহ হা/৩০৩৭)।
ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন, প্রথম বৈঠকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দরূদ পাঠ করেছেন মর্মে কিছুই বর্ণিত হয়নি। যিনি এটাকে মুস্তাহাব বলেন, তিনি দরূদ পাঠের সাধারণ নির্দেশের উপরে ধারণা করেই সম্ভবত এটা বলেন। যদিও শেষ বৈঠকে দরূদ পাঠের বিষয়টি বিশুদ্ধভাবে স্পষ্ট হয়ে গেছে’ (যাদুল মা‘আদ ১/২৩৭; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১২৯)।
ইমাম তিরমিযী বলেন, উক্ত আমল জারি রয়েছে বিদ্বানগণের নিকটে’ (তিরমিযী হা/৩৬৬-এর আলোচনা)। তবে অনেক বিদ্বান তাশাহহুদ পাঠের ‘আম’ হাদীছের আলোকে প্রথম তাশাহহুদে দরূদ পাঠ করা জায়েয বলেন (ছিফাতু ছালাতিন্নবী পৃঃ ১৪৬; ছহীহাহ হা/৮৭৮-এর আলোচনা)।
প্রশ্নঃ ঈমান কি বাড়ে ও কমে ?
-আলী আহসান
উত্তরঃ হাঁ। কথা ও কাজ অনুযায়ী ঈমান বাড়ে ও কমে।
প্রশ্ন : রাসূল (ছাঃ) বলেন, প্রোথিতকারী (পিতা) এবং যাকে প্রোথিত করা হয়েছে (সন্তান) উভয়েই জাহান্নামী (আবুদাঊদ হা/৪৭১৭)। হাদীছটির সঠিক ব্যাখ্যা জানতে চাই।
-আশরাফ হোসাইন
উত্তর : কন্যা সন্তান প্রোথিতকারিণী মাতা জাহান্নামে যাবে তার উক্ত অপরাধ ও কুফরীর কারণে। কিন্তু উপরোক্ত হাদীছ অনুযায়ী প্রোথিত সন্তান জাহান্নামে কেন যাবে তার ব্যাখ্যায় বিদ্বানগণ বলেন, হাদীছটি একটি নির্দিষ্ট ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত। আর তা হ’ল মুলায়কা নাম্নী জনৈকা মহিলার দুই ছেলে এসে তার মা সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ)-কে প্রশ্ন করেন যে, আমার মা জাহেলী যুগে মারা গেছেন। কিন্তু তিনি আত্মীয়তা সম্পর্ক রক্ষাকারীণী, অতিথিপরায়ণা এবং বিভিন্ন সৎকর্মে অভ্যস্ত ছিলেন। কিন্তু তিনি আমাদের একটি বোনকে প্রোথিত করার মাধ্যমে হত্যা করেন। এমতাবস্থায় তার সৎকর্মসমূহ তার উক্ত পাপের কাফফারা হবে কি? জবাবে রাসূল (ছাঃ) বললেন, প্রোথিতকারিণী ও প্রোথিত কন্যা উভয়ে জাহান্নামী হবে। তবে যদি প্রোথিতকারিণী ইসলাম কবুল করত তাহলে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করতেন’ (আহমাদ হা/১৫৯৬৫)। একই মর্মে আবুদাঊদে (হা/৪৭১৭, মিশকাত হা/১১২) হাদীছ এসেছে। এ বিষয়ে ছাহেবে মির‘আত বলেন, এটি একটি বিশেষ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত। হয়তবা ঐ প্রোথিত কন্যা সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) অহীর মাধ্যমে তার জাহান্নামী হওয়ার বিষয়টি অবগত হয়েছিলেন (মির‘আত হা/১১২-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ)। কেননা ইসলামী শরী‘আতে নাবালকের উপর কোন বিধান প্রযোজ্য হয় না। অতএব অপরাধী মাতার কারণে তার প্রোথিত সন্তান জাহান্নামী হবে না। আল্লাহ বলেন, ‘একজনের পাপ অন্যজনে বহন করবে না’ (আন‘আম ৬/১৬৪)। অন্য হাদীছে রাসূল (ছাঃ) প্রোথিত সন্তানকে জান্নাতী বলেছেন (আবুদাঊদ হা/২৫২১, মিশকাত হা/৩৮৫৬, সনদ ছহীহ)। অতএব অত্র হাদীছ দ্বারা পূর্বের হাদীছটি ‘মানসূখ’ হ’তে পারে। জীবন্ত প্রোথিত কন্যা জিজ্ঞাসিত হবে মর্মে কুরআনেও বর্ণিত হয়েছে (তাকভীর ৮১/৮৯)। বিস্তারিত- তাফসীরুল কুরআন ৩০ তম পারা, উক্ত আয়াতের আলোচনা দ্রঃ।
প্রশ্ন : মদীনার সনদ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।
-আলী আহসান
সঊদী আরব।
উত্তর : মদীনার সনদ মূলতঃ শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে বসবাসের জন্য রাসূল (ছাঃ) ও মদীনার ইহূদীদের মধ্যেকার একটি চুক্তি পত্র। ৩য় হিজরীর রবীউল আউয়াল মাসে কা‘ব বিন আশরাফের হত্যাকান্ডের পরে যা সম্পাদিত হয়েছিল।
মদীনার সংখ্যাগুরু আউস ও খাযরাজ নেতাগণ আগেই ইসলাম কবুল করায় এবং রাসূল (ছাঃ)-এর মদীনায় আগমনের পিছনে আউস ও খাযরাজ দুই প্রধান গোত্রের আমন্ত্রণ থাকায় তাদের সাথে সন্ধিচুক্তির কোন প্রশ্নই ছিল না। খাযরাজ গোত্রের আব্দুল্লাহ বিন উবাই নেতৃত্বের অভিলাষী থাকলেও গোত্রের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের বিরুদ্ধে গিয়ে প্রকাশ্যে কিছু করার ক্ষমতা তার ছিল না। ফলে বদর যুদ্ধের পর সে এবং তার অনুসারীরা প্রকাশ্যে ইসলাম কবুল করে। তবে সেসময় মদীনার সংখ্যালঘু ইহূদী সম্প্রদায় মুসলমানদের নবতর জীবনধারার প্রতি এবং বিশেষভাবে রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি ঈর্ষান্বিত থাকলেও অতি ধূর্ত হওয়ার কারণে প্রকাশ্য বিরোধিতায় লিপ্ত হয়নি। সমস্যা ছিল কেবল কুরায়েশদের নিয়ে। তারা পত্র প্রেরণ ও অন্যান্য অপতৎপরতার মাধ্যমে মুনাফিক ও ইহূদীদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে রাসূল (ছাঃ) ও তার সাথীদেরকে মদীনা থেকে বহিষ্কারের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে থাকে। একাজে তারা যাতে সফল না হয় সেজন্য রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ২য় হিজরীতে সর্বপ্রথম মদীনার পার্শ্ববর্তী এলাকার বনু যামরাহ, বনু বুওয়াত্ব, বনু মুদলিজ প্রভৃতি গোত্রের সাথে সহযোগিতা চুক্তি সম্পাদন করেন।
এভাবে রাসূল (ছাঃ) চেয়েছিলেন, যেন যুদ্ধাশংকা দূর হয় এবং সর্বত্র শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু এ সময় মদীনায় ইহূদী চক্রান্ত চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে। যার নেতৃত্বে ছিল তাদের ধনশালী নেতা ও ব্যঙ্গ কবি কা‘ব বিন আশরাফ। রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে কটূক্তি করাই ছিল যার স্বভাব। অতঃপর তাকে হত্যা করা হয়। ফলে ইহূদীরা ভীত হয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে এলে রাসূল (ছাঃ) তাঁর ও তাদের মধ্যে একটি লিখিত চুক্তি সম্পাদনের আহবান জানান। অতঃপর নবী করীম (ছাঃ) তাঁর ও তাদের মধ্যে এবং মুসলমানদের মধ্যে সার্বজনীন একটা দলীল লিখে দেন’ (আবুদাঊদ হা/৩০০০)।
অত্র হাদীছ দৃষ্টে প্রতীয়মান হয় যে, চুক্তি লিখনের এই বিষয়টি হিজরতের পরেই নয়, বরং ৩য় হিজরীর রবীউল আউয়াল মাসে কা‘ব বিন আশরাফের হত্যাকান্ডের পরে তা সম্পাদিত হয়েছিল।
অতএব ছহীহ হাদীছের আলোকে কেবল এটুকুই বলা যায় যে, এটি ছিল ৩য় হিজরীর রবীউল আউয়াল মাসের পরের ঘটনা। হিজরতের পরপরই নয়। নিঃসন্দেহে চুক্তিটি ছিল পারস্পরিক সন্ধিচুক্তি। কিন্তু চুক্তিটি কি ছিল, তার ভাষা কি ছিল, সেখানে কয়টি ধারা ছিল, কিছুই সঠিকভাবে বলার উপায় নেই।
তবে পার্শ্ববর্তী নিকট ও দূরের গোত্রসমূহের সাথে সন্ধিচুক্তিসমূহ সম্পাদনের পর ইহূদীদের সাথে অত্র চুক্তি সম্পাদনের ফলে প্রকৃত প্রস্তাবে ইসলামী খিলাফতের ভিত্তি স্থাপিত হয় এবং মদীনা তার রাজধানীতে পরিণত হয়। অতএব মদীনার সনদ ছিল একটি আন্তঃধর্মীয় ও আন্তঃসাম্প্রদায়িক চুক্তি, যার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ স্বার্থে ও একক লক্ষ্যে একটি উম্মাহ বা জাতি গঠিত হয়। আধুনিক পরিভাষায় যাকে ‘রাষ্ট্র’ বলা হয়। এই সনদ ছিল আধুনিক রাষ্ট্রচিন্তার সর্বপ্রথম ভিত্তি স্বরূপ। (বিস্তারিত দ্রষ্টব্য : সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ‘মদীনার সনদ’ অধ্যায়)।
প্রশ্ন : মহিলারা পরপুরুষের সামনে সশব্দে কুরআন তেলাওয়াত করতে পারবে কি ?
-ফায়ছাল
উত্তর : সাধারণভাবে এটা জায়েয নয়। আল্লাহ বলেন, ‘পরপুরুষের সাথে কোমল কণ্ঠে তোমরা এমনভাবে কথা বলো না, যাতে যার অন্তরে ব্যাধি আছে, সে প্রলুব্ধ হয়’ (আহযাব ৩৩/৩২)। তবে প্রয়োজনের তাকীদে যেমন শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে নিরূপায় অবস্থায় সাধারণ তেলাওয়াত পরপুরুষের নিকটে শুনানোতে বাধা নেই (উছায়মীন, লিকাউশ শাহর প্রশ্ন নং ৫৫)। যেমন রাসূল (ছাঃ) নারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিতেন এবং তাদের দাবীক্রমে তাদের শিক্ষা দানের জন্য একটি দিন নির্ধারণ করে দেন (বুখারী হা/১০১)।
প্রশ্ন : সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার অবশ্য পালনীয় দায়িত্ব কি কি?
-সায়মা,
উত্তর : সন্তানকে সার্বিক প্রতিপালনই পিতা-মাতার মৌলিক দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালন না করলে তাদেরকে আল্লাহর নিকট জবাবদিহিতার সম্মুখীন হ’তে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, মহিলা ও তার স্বামী তার সন্তানের দায়িত্বশীল। অতএব তাদেরকে স্বীয় দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হতে হবে (বুখারী হা/২৪০৯, মুসলিম হা/৪৮২৮)। সার্বিক দায়িত্ব সমূহের মধ্যে রয়েছে যেমন (১) তাদের ভরণ-পোষণের জন্য খরচ করা (বাক্বারাহ ২/২৩৩; বুখারী হা/৫৩৬৪) (২) আকীকা দেওয়া (বুখারী হা/৫৪৭১) (৩) সুন্দর নাম রাখা (মুসলিম হা/২১৩৯, ২১৩২; তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৭৫২, ৪৭৭৪) (৪) খাৎনা করা (বুখারী হা/৫৮৯১; মিশকাত হা/৪৪২০) (৫) দ্বীনী জ্ঞান ও আমল শিক্ষা দেওয়া। যেমন ছালাত শিক্ষা প্রদান এবং প্রয়োজনে প্রহারকরণ (আবুদাউদ হা/৪৯৫; মিশকাত হা/৫৭২, ১২৪০) (৬) সময়মত বিবাহ দেওয়া (ইবনু মাজাহ হা/১৮৬৩; ছহীহাহ হা/১০৬৭) (৭) তাদের জন্য দো‘আ করা(ইবরাহীম ১৪/৪০) এবং (৮) তাদেরকে উপদেশ দেওয়া (লোকমান ৩১/১৩) ইত্যাদি।
প্রশ্ন : অনেক আলেমকে দেখা যায় শরী‘আতের মাসআলাগত বিষয়ে বিরোধী পক্ষের প্রতি মোটা অংকের অর্থের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন। এরূপ চ্যালেঞ্জ প্রদান ও গ্রহণ কতটুকু শরী‘আতসম্মত?
-সুহাইল,
উত্তর : এগুলি নিতান্তই নীতি-বহির্ভূত কাজ। শরী‘আতের বিষয়বস্ত্তসমূহ নিয়ে এরূপ করা খেল-তামাশার শামিল। যা আখেরাতে চরম শাস্তিযোগ্য অপরাধ (লোকমান ৩১/৬)। বরং এভাবে টাকার চ্যালেঞ্জ দেওয়া জুয়ার পর্যায়ভুক্ত কাজ, যা হারাম (মায়েদাহ ৫/৯০)। অতএব এসব থেকে দূরে থাকা আবশ্যক। এক্ষেত্রে শরী‘আতসম্মত পন্থা হ’ল আন্তরিকতার সাথে সংশোধনের উদ্দেশ্যে একে অপরের ভুল ধরিয়ে দেওয়া এবং নিজেকে সংশোধন করা। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান কর প্রজ্ঞা ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের সাথে বিতর্ক কর সুন্দর পন্থায়। নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক ভালভাবেই জানেন কে তার পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে এবং তিনি ভালভাবেই জানেন কে সুপথপ্রাপ্ত হয়েছে’ (নাহল ১৬/১২৫)।
প্রশ্ন : ফেসবুক চ্যাটের কারণে স্ত্রীর সাথে মনোমালিন্যের পর আমি ফেসবুক ব্যবহার করব না বলে কসম করি। বর্তমানে আমি তার সম্মতিতে ফেসবুক ব্যবহার করছি। এক্ষণে উক্ত কসম ভঙ্গের কারণে কোন কাফফারা দিতে হবে কি?
-বাবু
*[আরবীতে সুন্দর ইসলামী নাম রাখুন! (স.স)]
উত্তর : কাফফারা দিতে হবে (মুসলিম হা/১৬৫০, মিশকাত হা/৩৪১৩)। কসম ভঙ্গের কাফফারা হ’ল দশজন মিসকীনকে মধ্যম মানের খাদ্য খাওয়ানো। অথবা তাদের কাপড় দান করা কিংবা একটি দাস মুক্ত করা। এতে অসমর্থ হ’লে তিন দিন ছিয়াম পালন করা (মায়েদাহ ৫/৮৯)।
প্রশ্ন : মসজিদের ভিতরে বিশেষ করে ছালাতরত অবস্থায় আঙ্গুল ফুটানো যাবে কি ?
-মতীউর রহমান
উত্তর : জামা‘আত চলাকালে এথেকে বিরত থাকা কর্তব্য। কারণ এতে মুছল্লীদের খুশূ-খুযূ বিনষ্ট হয়। ইবনু আববাস (রাঃ)-এর গোলাম শো‘বা বলেন, আমি ইবনু আববাসের পাশে ছালাতরত অবস্থায় আঙ্গুল ফুটালে তিনি ছালাত শেষে আমাকে ধমক দিয়ে বলেন, তোমার ধ্বংস হোক তুমি ছালাতের মধ্যে আঙ্গুল ফুটালে ? (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/৭৩৫৮; ইরওয়া হা/৩৭৮)। তবে ছালাতের মধ্যে উঠা-বসা করতে যদি কোন অঙ্গ আপনা থেকেই ফুটে যায়, সেক্ষেত্রে কোন দোষ নেই।
প্রশ্ন : সূরা ফাতিহা দ্বারা কিভাবে সাপের বিষ নামাতে হয় ?
-মারূফ আহমাদ,
উত্তর : সূরা ফাতিহা পড়বে এবং মুখের থুথু রোগীর ক্ষতস্থানে দিবে। এভাবে বার বার পড়তে থাকলে ও দিতে থাকলে বিষ নেমে যাবে ইনশাআল্লাহ (মুসলিম হা/২২০১ (৬৫), বুখারী হা/৫৭৩৭)।
প্রশ্ন : আমি ছালাত আদায় করি। কিন্তু আমার পরিবার করে না এবং কেউ কেউ তা করতে অস্বীকার করে। এক্ষণে আমার করণীয় কি ?
-নাজমুল ইসলাম
উত্তর : তাদের উপর আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হয়ে সর্বাবস্থায় দাওয়াত অব্যাহত রাখতে হবে। প্রয়োজনে বাধ্য করতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি তোমার পরিবারকে ছালাতের আদেশ দাও এবং তুমি এর উপর অবিচল থাক’ (ত্বোয়াহা ২০/১৩২)। পরিবারে কেউ ছালাতকে ইসলামের ফরয বিধান হিসাবে অস্বীকার করলে সে ‘কাফের’ পর্যায়ভুক্ত হয়ে যাবে। যার শাস্তি মৃত্যুদন্ড। যা বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের। উক্ত দায়িত্ব পালন না করলে সরকার গুনাহগার হবেন, অন্যেরা নয়। এমতাবস্থায় ঐ ব্যক্তিকে এড়িয়ে চলতে হবে। আর কোনভাবেই না হ’লে অন্তরে তাদের প্রতি ঘৃণা পোষণ করতে হবে (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯১০)।
প্রশ্ন : ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী ‘যে জাতি কোন নারীকে ক্ষমতাসীন করে সে জাতি কখনোই সফলকাম হবে না’ (বুখারী)। এক্ষণে নারী নেতৃত্বাধীন দেশের পুরো দেশবাসী, না কেবল ভোটদাতারা এর অন্তর্ভুক্ত হবে?
-আব্দুস সালাম,
উত্তর : কেবল ভোটদাতা বা সমর্থন দাতারাই এ হাদীছের অন্তর্ভুক্ত হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘তোমাদের উপর অনেক শাসক নিযুক্ত হবে। যাদের কোন কাজ তোমরা পসন্দ করবে এবং কোন কাজ অপসন্দ করবে। এক্ষণে যে ব্যক্তি উক্ত অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করবে, সে দায়িত্বমুক্ত হবে। আর যে ব্যক্তি তা অপসন্দ করবে, সে (মুনাফেকী থেকে) নিরাপদ থাকবে। কিন্তু যে ব্যক্তি তাতে সন্তুষ্ট থাকবে ও তার অনুসরণ করবে... (সে তাদের ন্যায় গোনাহগার হবে) (মুসলিম হা/১৮৫৪, মিশকাত হা/৩৬৭১)।
প্রশ্ন : সরকারী এমপিওভুক্ত মাদ্রাসায় যাকাত, ফেৎরা, ওশর, কুরবানীর চামড়া ইত্যাদি গ্রহণ করা এবং তা প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় করা যাবে কি ?
-মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম
উত্তর : সরকারী এমপিওভুক্ত মাদ্রাসায় এসব অর্থ গ্রহণ করা যাবে না। বরং এযুগে বেসরকারী মাদরাসা সমূহের মধ্যে যারা ছহীহ আক্বীদা ও আমল প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে এবং একদল দাঈ ইলাল্লাহ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছে এবং যাদের পর্যাপ্ত আর্থিক সক্ষমতা নেই, কেবল তারাই এসব ‘ফী সাবীলিল্লাহ’ খাতের দানগুলি গ্রহণ করতে পারবে ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্ন : রামাযানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিগুলিতে তারাবীহর জামা‘আত প্রথম রাতে না করে শেষ রাতে করায় শরী‘আতে কোন বাধা আছে কি ?
-রাশেদুল হাসান,
উত্তর : রাসূল (ছাঃ) ২৩, ২৫ ও ২৭ যে তিনদিন জামা‘আতের সাথে তারাবীহর ছালাত আদায় করেছেন সেই তিনদিন প্রথম রাতেই শুরু করেছেন। যা কখনো রাত্রির এক-তৃতীয়াংশ, কখনো অর্ধাংশ এবং শেষদিন সাহারীর আগ-পর্যন্ত ছালাত আদায় করেছেন। অতঃপর তিনি বলেন, যে ব্যক্তি ইমামের সাথে শেষ পর্যন্ত রাত্রির ছালাত আদায় করবে, তার জন্য সারা রাত্রি ছালাত আদায়ের নেকী লেখা হবে (আবুদাঊদ হা/১৩৭৫, তিরমিযী, মিশকাত হা/১২৯৮)।
ইমাম আহমাদ (রাঃ)-কে তারাবীহর ছালাত শেষ রাত পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি বললেন, না। বরং মুসলমানদের প্রচলিত আমলই আমার নিকটে অধিক প্রিয় (ইবনু কুদামা, আল-মুগনী ২/১২৫)।
প্রশ্ন : কুরআন-হাদীছ থেকে দো‘আ পড়ে পানিতে ফুঁক দিয়ে সেই পানি খাওয়া বা তা দিয়ে গোসল করায় শরী‘আতে কোন বাধা আছে কি ?
-আব্দুল করীম,
উত্তর : এতে কোন বাধা নেই। আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, একদিন ছালাতরত অবস্থায় রাসূল (ছাঃ)-কে বিচ্ছু দংশন করলে ছালাত শেষে তিনি বললেন, বিচ্ছুর উপর আল্লাহর লানত বর্ষিত হৌক! সে কাউকে ছাড়ে না এমনকি মুছল্লীকেও নয়। অতঃপর তিনি পানি এবং লবন নিয়ে ক্ষতস্থানের উপর ঘসতে লাগলেন এবং সূরা নাস ও ফালাক্ব পড়তে থাকলেন (ত্বাবারাণী ছাগীর, সিলসিলা ছহীহাহ হা/৫৪৮)।
আয়েশা (রাঃ) পানিতে দো‘আ পাঠ করে উক্ত পানি দ্বারা রোগীর দেহ ধৌত করাকে দোষের কিছু মনে করতেন না (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/২৩৯৭৫, সনদ ছহীহ; আব্দুল মুহসিন আববাদ, আবুদাঊদ হা/৩৮৮৫-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ)।
প্রশ্ন : কলম, প্লাস্টিক ইত্যাদি ফ্যাক্টরীর মালিকেরা যদি সূদের উপর ঋণ নিয়ে প্রতিষ্ঠান চালায়, সেসব প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করা যাবে কি ?
-হাসান বিন নযরুল
উত্তর : বৈধ জিনিস উৎপাদনকারী, বৈধ কোন কাজে প্রতিষ্ঠিত যেকোন কোম্পানীতে চাকুরী করা যাবে। যদিও তার মজুরী সূদযুক্ত অর্থ দিয়ে প্রদান করা হয়। আর এজন্য দায়ী হবে উক্ত সূদের গ্রহীতা কোম্পানীর মালিক (উছায়মীন, লিকাউল বাবিল মাফতূহ ১৫/৫৯)। তবে সরাসরি সূদী লেনদেন হয় যেমন ব্যাংক, বীমা সহ এরূপ কোন প্রতিষ্ঠানের কোন কর্মে অংশগ্রহণ করা যাবে না।
প্রশ্ন : আমাদের দেশে সাধারণত সেশন জটের কারণে স্নাতক পাশ করতে ২-৩ বছর লস হয়। সেকারণ এসএসসি পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীরা বয়স কমিয়ে দেয়। এরূপ কাজ শরী‘আতসম্মত হবে কি ?
-আরীফুর রহমান, জাপান।
উত্তর : এরূপ কাজ শরী‘আত সম্মত হবে না। কারণ এটি প্রতারণা এবং মিথ্যার অন্তর্ভুক্ত, যা নিঃসন্দেহে হারাম। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি প্রতারণা করে, সে আমার দলভুক্ত নয় (মুসলিম হা/১০১; মিশকাত হা/৩৫২০)। এক্ষণে এরূপ কাজ করে থাকলে এবং তা পরিবর্তন করা সম্ভব না হ’লে এজন্য আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।
প্রশ্ন : ছয় বছরের শিশু সাথে নিয়ে মসজিদে ছালাত আদায় করলে ইমাম ছাহেব ‘শিশুরা ছালাতের একাগ্রতা বিনষ্ট করে’-এই কারণ দেখিয়ে সাথে আনতে নিষেধ করেছেন। এ নিষেধাজ্ঞা শরী‘আতসম্মত কি?
-লুৎফর রহমান,
উত্তর : ছালাতের শিশুদের সাথে করে নিয়ে যাওয়া অন্যায় নয় এবং শিশুরা ছালাতের একাগ্রতা বিনষ্ট করে এটাও ঠিক নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) শিশুর ক্রন্দন শ্রবণের কারণে ছালাত সংক্ষিপ্ত করেছেন (বুখারী হা/৭০৯, মুসলিম হা/৪৭০। কিন্তু শিশুকে সাথে আনতে নিষেধ করেননি। উপরন্তু তিনি নিজেও নাতনীকে নিয়ে জামা‘আতে ছালাত আদায় করেছেন। আবু ক্বাতাদাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে লোকদের ইমামতি করতে দেখেছি, এমতাবস্থায় নাতনী উমামা বিনতে আবিল ‘আছ তার কাঁধে ছিল। যখন তিনি রুকূতে যেতেন, তখন তাকে রেখে দিতেন এবং যখন সিজদা হ’তে উঠতেন, তখন তাকে (পুনরায় কাঁধে) ফিরিয়ে নিতেন (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৯৮৪ ‘ছালাত’ অধ্যায়)। এছাড়া তিনি হাসান ও হোসাইন (রাঃ)-কে কোলে নিয়ে খুৎবাও দিয়েছেন (আবুদাঊদ হা/১১০৯, ইবনু মাজাহ হা/২৯২৬)। অতএব ইমাম ছাহেবের এরূপ নিষেধাজ্ঞা জারি করা ঠিক হয়নি।
প্রশ্ন : মসজিদে নববীতে একাধারে ৪০ ওয়াক্ত ছালাত আদায়কারী জাহান্নামের আগুন ও মুনাফিকের আলামত থেকে মুক্তি পাবে মর্মে কোন বিধান আছে কি ?
-ইউসুফ, ভারত।
উত্তর : এ মর্মে বর্ণিত হাদীছটি মুনকার ও যঈফ। এর সনদে নাবীত্ব ইবনু ওমর নামে একজন অপরিচিত রাবী আছেন (আহমাদ হা/১২৬০৫; সিলসিলা যঈফাহ হা/৩৬৪, সনদ যঈফ- আলবানী, আরনাঊত্ব)। অতএব উক্ত আমল অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
প্রশ্ন : স্বামী-স্ত্রী জামা‘আতবদ্ধভাবে ছালাত আদায় করতে পারবে কি ?
-আফিয়া সুলতানা
উত্তর : স্বামী-স্ত্রী জামা‘আত করে ছালাত আদায় করতে পারে। তবে স্ত্রীকে স্বামীর পিছনে দাঁড়াতে হবে (মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ হা/১৭৪৪১, মাজমাউয যাওয়ায়েদ হা/৭৫৪৭, সনদ ছহীহ)। এতদ্ব্যতীত পুরুষ ও নারী একত্রে জামা‘আত করার সময় নারী পিছনে দাঁড়াবে। যেমন আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) একদিন আমাকে এবং আমার মা ও খালাকে নিয়ে ছালাত আদায় করেছিলেন। তখন আমাকে তাঁর ডান পার্শ্বে এবং মহিলাদের আমাদের পিছনে দাঁড় করিয়েছিলেন (মুসলিম হা/৬৬০)।
প্রশ্ন : একসময় গান-বাজনা করতাম এবং ছাত্র-ছাত্রীদের শিখাতাম। এখন সেপথ থেকে ফিরে আসলেও শিখানোর কারণে ঐ ছাত্র-ছাত্রীদের কৃত গোনাহের যে অংশ নিয়মিতভাবে আমার আমালনামায় যোগ হচ্ছে, তা থেকে বাঁচার উপায় কি?
-ফযলুল হক
উত্তর : কেউ খালেছ নিয়তে তওবা করলে আল্লাহ তার পূর্বে কৃত সকল গুনাহ মাফ করে দেন। আল্লাহ বলেন, যারা তওবা করে ও সংশোধিত হয় এবং সত্য প্রকাশ করে, বস্ত্ততঃ আমি তাদের প্রতি ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (বাক্বারাহ ২/১৬০)। অতএব তাদের কৃত গোনাহ আপনার আমলনামায় যুক্ত হবে না ইনশাআল্লাহ। তবে সম্ভব হ’লে উক্ত ছাত্র-ছাত্রীদের গান-বাজনা থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করতে হবে।
প্রশ্ন : দোকানে সিঁদুর সহ হিন্দু ধর্মীয় জিনিসপত্র ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে কি ?
-মীযানুর রহমান,
উত্তর : ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ভ্রান্ত ধর্ম-বিশ্বাসের মৌলিক জিনিসপত্র ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না। এরূপ কাজ উক্ত ধর্মের প্রচার-প্রসারে সহযোগিতার শামিল। আর আল্লাহ অন্যায় কর্মে সহযোগিতা করতে নিষেধ করেছেন (মায়েদাহ ৫/২)। এছাড়া রাসূল (ছাঃ) খৃষ্টানদের ক্রুশ বা পৌত্তলিকদের ছবি-মূর্তি দেখলে ধ্বংস করে দিতেন (বুখারী, মুসলিম; মিশকাত হা/৪৪৯১, ৪৪৯৩)। অতএব এ সকল বস্ত্ত ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৩/৪৩৭)।
প্রশ্ন : পশুর পেটে বাচ্চা থাকা অবস্থায় ঐ পশু কুরবাণী করা যাবে কি?
-খাদেমুল ইসলাম
উত্তর : পেটে বাচ্চা থাকা অবস্থায় পশু কুরবাণী করায় শরী‘আতে কোন বাধা নেই। এছাড়া উক্ত পশুর গোশত খাওয়া যাবে। এমনকি রুচি হ’লে পেটের বাচ্চাও খেতে পারে। আবু সাঈদ খুদরী বলেন, আমি বললাম হে আল্লাহর রাসূল! আমরা উটনী, গাভী ও ছাগী যবেহ করি এবং কখনো কখনো আমরা তার পেটে বাচ্চা পাই। আমরা ঐ বাচ্চা ফেলে দিব, না খাব? রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘তোমাদের ইচ্ছা হ’লে খাও। কারণ বাচ্চার মাকে যবেহ করা বাচ্চাকে যবেহ করার শামিল’ (আবুদাউদ হা/২৮২৮; মিশকাত হা/৪০৯১-৯২)।
প্রশ্ন : একজন প্রাণী চিকিৎসক হিসাবে কুকুর, বিড়াল ইত্যাদির চিকিৎসা করে অর্থ উপার্জন করায় শরী‘আতে কোন বাধা আছে কি ?
-ডা. আনোয়ার হোসাইন,
উত্তর : চিকিৎসক হিসাবে কুকুর, বিড়াল ইত্যাদির চিকিৎসা করা এবং তার বিনিময় গ্রহণ করায় বাধা নেই। এটি পশুদের প্রতি দয়ার নিদর্শন, যাতে প্রভূত নেকী রয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, এক লোক এক পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করানোর কারণে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। ছাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! প্রাণীর জীবন রক্ষায় ছওয়াব রয়েছে? তিনি বললেন, প্রত্যেক তাযা প্রাণ রক্ষায় ছওয়াব রয়েছে (বুখারী হা/২৩৬৩, মিশকাত হা/১৯০২)। তিনি বলেন, একজন ব্যভিচারী নারী একটি পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করানোর কারণে জান্নাতে যাবে (বুখারী হা/৩৪৬৭)।
প্রশ্ন : ছালাতরত অবস্থায় কেউ অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলে মুছল্লীদের করণীয় কি ?
-ফীরোয আহমাদ
উত্তর : উক্ত অবস্থায় ছালাত ছেড়ে দিয়ে কিছু মুছল্লী অজ্ঞান ব্যক্তির সেবা করবে এবং অন্যরা অন্য কাউকে ইমামতির দায়িত্ব দিয়ে বাকী ছালাত আদায় করবে। কারণ এতে অজ্ঞান ব্যক্তির জীবনাবসানের আশংকা রয়েছে। যেমন এরূপ আশংকা থাকায় রাসূল (ছাঃ) ছালাতরত অবস্থায় সাপ ও বিচ্ছু মারতে বলেছেন (আহমাদ, আবুদাঊদ, নাসাঈ, তিরমিযী, মিশকাত হা/১০০৪)। ওমর (রাঃ) ছালাতরত অবস্থায় আহত হ’লে উপস্থিত ছাহাবীগণ তাঁকে নিয়ে তার বাড়িতে যান। বাকীদের নিয়ে আব্দুর রহমান বিন আওফ (রাঃ) সংক্ষিপ্ততম সূরা দিয়ে ফজরের ছালাত আদায় করেন (ছহীহ ইবনু হিববান হা/৬৯০৫, সনদ ছহীহ; আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ৭/১৩৭)।
প্রশ্ন : জনৈক আলেম বলেন, ইবরাহীম (আঃ) আমাদের ‘জাতির পিতা’-একথা ভুল। বরং তিনি কুরায়েশ বংশের পিতা। এ বক্তব্যের সত্যতা আছে কি ?
-জুয়েল মোল্লা
*[আরবীতে সুন্দর ইসলামী নাম রাখুন! (স.স)]
উত্তর : বক্তব্যটি সঠিক নয়। ইবরাহীম (আঃ) কেবল মুসলিম জাতির পিতা নন বরং তিনি ছিলেন ইহূদী-খৃষ্টান-মুসলমান সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের পিতা। কারণ আদম (আঃ) হ’তে ইবরাহীম (আঃ) পর্যন্ত সকল নবী ও রাসূল বাদে পরবর্তী সকল নবী ও রাসূল তার বংশধর’ (হাদীদ ৫৭/২৬; ইবনু কাছীর, তাফসীর সূরা আলে ইমরান ২৩-২৪ ও আন‘আম ৮৪ আয়াত)। তিনি যেমন পুত্র ইসমাঈলের পিতা হিসাবে আরব জাতির পিতা ছিলেন। তেমনি অপর পুত্র ইসহাক (আঃ)-এর পিতা হিসাবে বনু ইস্রাঈলেরও পিতা ছিলেন (উছায়মীন, লিকাউল বাবিল মাফতূহ ১৬/১৮৯)। এছাড়া মুসলিম জাতির পিতা বলে আখ্যায়িত করে আল্লাহ বলেন, مِلَّةَ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ ‘তোমরা তোমাদের পিতা ইবরাহীমের ধর্মের উপর কায়েম থাক’ (হজ্জ ৭৮)। উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) সকাল-সন্ধ্যা একটি দো‘আ পাঠ করতেন। যার মধ্যে তিনি বলতেন, আমি সকাল করলাম ... আমাদের পিতা ইবরাহীমের মিল্লাতের উপর, যিনি ছিলেন একনিষ্ঠ ও আজ্ঞাবহ’ (দারেমী, আহমাদ হা/১৫৩৬৪; ছহীহাহ হা/২৯৮৯)।
প্রশ্ন : যে ব্যক্তির কথা ও কাজে মিল থাকে না, তার আদেশ-নিষেধ মানা যাবে কি ?
-আব্দুছ ছামাদ
উত্তর : কথা ও কাজের মধ্যে মিল থাকা মুমিনের অন্যতম গুণ। যার কথা ও কাজের মধ্যে মিল নেই, তার পরিণতি সম্পর্কে কুরআন ও হাদীছে কঠোর সাবধান বাণী উচ্চারিত হয়েছে (ছফ ২; বুখারী হা/৩২৬৭, মুসলিম, মিশকাত হা/৫১৩৯; ‘সৎ কাজের নির্দেশ’ অনুচ্ছেদ)। নিজে সৎকাজ করা এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকা যেমন ওয়াজিব, তেমনি অপরকে সৎকাজের উপদেশ দেওয়া এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করাও ওয়াজিব। তবে একটি ওয়াজিব পালন করতে না পারলেও আরেকটি ওয়াজিব ত্যাগ করা যাবে না। সর্বদা উপদেশ দিয়ে যেতে হবে। কারণ আল্লাহ বলেন, ‘তুমি উপদেশ দাও। কারণ উপদেশ মুমিনদের উপকার করে’ (যারিয়াত ৫১/৫৫)। তাবেঈ বিদ্বান সাঈদ বিন জুবায়ের (রহঃ) বলেন, ‘মানুষ যদি নিজে করতে না পারার কারণে সৎকাজের আদেশ এবং অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা থেকে বিরত থাকত, তাহ’লে সৎ-অসৎ কাজের আদেশ-নিষেধকারী খুঁজে পাওয়া যেত না’ (আলোচনা দ্রঃ ইবনু কাছীর, বাক্বারাহ ৪৪ আয়াতের ব্যাখ্যা)।
অতএব কারো আদেশ-নিষেধ যদি শরী‘আতসম্মত হয়, সেক্ষেত্রে তা মেনে চলায় কোন বাধা নেই। আল্লাহ বলেন, সুসংবাদ দাও আমার ঐ সব বান্দাদেরকে’ ‘যারা মনোযোগ দিয়ে কথা শোনে এবং তার উত্তমটি গ্রহণ করে’ (যুমার ৩৯/১৭-১৮)। এখানে ‘উত্তম কথা’ বলতে ‘কুরআন ও হাদীছ’কে বুঝানো হয়েছে।
তবে শরী‘আতের আদেশ-নিষেধ গ্রহণের সময় ছহীহ আক্বীদা ও আমলসম্পন্ন আলেম ও তাদের লেখনী থেকে গ্রহণ করতে হবে। শিরক বা বিদ‘আতপন্থীদের নিকট থেকে নয়।
ওমর (রাঃ) বলেন, তোমরা রায়পন্থীদের থেকে দূরে থাক। ওরা সুন্নাতের শত্রু (দারাকুৎনী হা/৪২৩৬, সিলসিলাতুল আছার আছ-ছহীহাহ হা/২৭৭)। তাবেঈ বিদ্বান ইবনু সীরীন ও হাসান বাছরী বলেন, তোমরা কখনোই বিদ‘আতী ও ঝগড়াটে লোকদের সাথে বসবে না, তাদের সাথে তর্কে জড়াবে না ও তাদের কোন কথা শুনবে না (দারেমী হা/৪০১)। ইবনু সীরীন পরিষ্কারভাবে বলেন, নিশ্চয়ই কুরআন-হাদীছের ইলম হ’ল দ্বীন। অতএব তোমরা দেখ কার কাছ থেকে দ্বীন গ্রহণ করছ’ (মুক্বাদ্দামা মুসলিম, দারেমী হা/৪২৪)।
প্রশ্ন : হজ্জব্রত পালনের সময় পুরুষের জন্য মাথায় ও দাড়িতে মেহেদী লাগিয়ে যাওয়ায় শরী‘আতে কোন বাধা আছে কি ?
-আব্দুস সাত্তার
উত্তর : ইহরাম অবস্থায় মেহেদী ব্যবহার করা যাবে না। রাসূল (ছাঃ) ইহরাম অবস্থায় রঙিন ও যাফরানযুক্ত কাপড় পরিধান করতে নিষেধ করেছেন (বুখারী হা/৫৮৪৭; মিশকাত হা/২৬৭৮)। এ হাদীছের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী বলেন, মেহেদী যাফরানের ন্যায় (আল-মাজমূ‘ ১/২৯৫)। অতএব ইহরামের পূর্বে দাড়িতে মেহেদী দেওয়া যাবে, কিন্তু পরে নয়। যেমন রাসূল (ছাঃ) ইহরামের পূর্বে সুগন্ধি ব্যবহার করেছেন, পরে নয় (বুখারী হা/২৭০)।
প্রশ্ন : পিতা জীবিত থাকা অবস্থায় ছেলে মারা গেলে তার অর্জিত সম্পদে পিতা-মাতা কোন অংশ পাবেন কি?
-আব্দুল ওয়ারেছ
উত্তর : পিতা জীবিত থাকা অবস্থায় ছেলে মারা গেলে তার অর্জিত সম্পদে পিতা-মাতা ওয়ারিছ হবেন। প্রথমতঃ মৃত ব্যক্তির স্ত্রী ও সন্তান থাকা অবস্থায় পিতা-মাতা এক-ষষ্ঠাংশ করে পাবেন (নিসা ৪/১১)। এছাড়া আরো কয়েকটি অবস্থা রয়েছে। সেসব ক্ষেত্রে অবস্থাভেদে নির্ধারিত অংশ পাবেন।
প্রশ্ন : কারো উপর মিথ্যা অপবাদ লাগিয়ে প্রচার করা কিরূপ পাপের অন্তর্ভুক্ত?
-ওমর ফারূক
উত্তর : মিথ্যা অপবাদ হ’ল কারো ব্যাপারে অন্যের নিকটে এমন কথা বলা যা তার মাঝে নেই (মুসলিম, মিশকাত হা/৪৮২৮)। কারো উপর মিথ্যা অপবাদ লাগিয়ে প্রচার করা কাবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। আর মিথ্যা অপবাদকারীর শাস্তি হচ্ছে ৮০ বেত্রাঘাত (নূর ২৪/৪-৫)। ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, এ ব্যাপারে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত রয়েছে যে, সতীসাধ্বী নারীর উপর অপবাদ দেওয়ার শাস্তি পুরুষের উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে (ফৎহুল বারী ১২/১৮১)। উল্লেখ্য, শরী‘আত নির্ধারিত হদ্দ বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের, সাধারণভাবে অন্যদের নয়।
প্রশ্ন : আমাদের দেশে তৃতীয় পক্ষ থেকে উকীল নিয়োগ করে উক্ত ‘উকীল বাবা’র মাধ্যমে বিবাহ পড়ানো হয়। এটা কতটুকু শরী‘আত সম্মত ?
-মনীরুল ইসলাম
উত্তর : এটি শরী‘আত সম্মত নয়। পিতার উপস্থিতিতে অন্য কেউ উকীল হ’তে পারে না। পিতার অনুপস্থিতিতে দাদা, অতঃপর তুলনামূলক নিকটবর্তী আত্মীয়রা উকীল হবে (মুগনী ৯/৩৫৫)। যেমন মা‘ক্বিল বিন ইয়াসার (রাঃ) তার বোনকে বিবাহ দিয়েছিলেন (বুখারী হা/৫১৩০)।
প্রশ্ন : মহিলাদের উপর কখন হজ্জ ফরয হবে? স্বামীর নিকট দু’জনের খরচের সমপরিমাণ অর্থ থাকলে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উপর হজ্জ ফরয হবে কি ?
-হাফীযুর রহমান
উত্তর : বায়তুল্লাহ পর্যন্ত যাতায়াতের সামর্থ্য থাকলে প্রত্যেক মুমিন নারী ও পুরুষের উপর হজ্জ ফরয হবে (আলে-ইমরান ৩/৯৭)। সেই হিসাবে স্বামী ও স্ত্রীর উপর পৃথকভাবে হজ্জ ফরয হবে। আল্লাহ বলেন, আমরা তোমাদের কোন পুরুষ বা নারীর কোন আমল বিনষ্ট করি না’ (আলে ইমরান ৩/১৯৫)। অতএব স্বামী উভয়ের খরচ বহনে সক্ষম হ’লেই স্ত্রীর উপর হজ্জ ফরয হয় না। তবে স্বামী স্বীয় স্ত্রীকে হজ্জে নিয়ে গেলে তার উপর থেকে হজ্জের ফরযিয়াত শেষ হয়ে যাবে। পরে সক্ষম হ’লেও আর করার প্রয়োজন হবে না। উল্লেখ্য যে, নারীদের সাথে মাহরাম ব্যক্তি থাকা অপরিহার্য (বুখারী হা/১০৮৬; মিশকাত হা/২৫১৫)।
প্রশ্ন : এক শ্রেণীর মানুষ ১৮ই জিলহজ্জকে ‘ঈদে গাদীর’ হিসাবে আখ্যায়িত করে। এদিনের বিভিন্ন ফযীলত যেমন এদিনে রাসূল (ছাঃ) ছিয়াম পালন করেন, এদিন আল্লাহ ইসলামের পূর্ণতা ঘোষণা করেন ইত্যাদি বলে থাকে। এর কোন ভিত্তি আছে কি ?
-আশরাফুল হক
উত্তর : এগুলি সবই বানাওয়াট কথা এবং ভ্রান্ত ফিরক্বা শী‘আদের অনুকরণ মাত্র। ঘটনা হ’ল এই যে, বিদায় হজ্জ থেকে ফেরার পথে বুরাইদা আসলামী (রাঃ) রাসূলে করীম (ছাঃ)-এর নিকটে আলী (রাঃ) সম্পর্কে কিছু অভিযোগ পেশ করেন। যা ইয়ামনে গণীমত বণ্টন সংক্রান্ত বিষয়ে ছিল। মূলতঃ এটা ছিল বুরাইদার বুঝের ভুল। এজন্য আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) খুম কূয়ার নিকটে যাত্রাবিরতি করে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন। যেখানে তিনি নবী পরিবারের উচ্চ মর্যাদা ব্যাখ্যা করেন। অতঃপর আলীর হাত ধরে বলেন, مَنْ كُنْتُ مَوْلاَهُ فَعَلِىٌّ مَوْلاَهُ ‘আমি যার বন্ধু, আলীও তার বন্ধু’ (তিরমিযী হা/৩৭১৩; মিশকাত হা/৬০৮২; ছহীহাহ হা/১৭৫০; বিস্তারিত দ্রঃ সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) ৬৪৩ পৃঃ)। এই ভাষণটি ইতিহাসে খুম কূয়ার নিকটে ভাষণ (خطبة غدير خم) বলে পরিচিত।
দ্বিতীয়তঃ ১৮ই যিলহজ্জ ওছমান (রাঃ)-এর শাহাদত বরণের তারিখকে শী‘আরা ঈদের দিন হিসাবে ঘোষণা করে। যা আববাসীয় খলীফা মুতী‘ বিন মুক্বতাদিরের সময় তাঁর কট্টর শী‘আ আমীর মুইযযুদ্দৌলা ৩৫১ হিজরীর ১৮ই যিলহজ্জ তারিখে উক্ত ঘোষণা করেন। ফলে তখন থেকে এই দিনটি শী‘আদের মধ্যে ঈদুল আযহার চাইতেও গুরুত্ব পায় (বিস্তারিত দ্রঃ আশূরায়ে মুহাররম পৃঃ ৬-৭)।
প্রশ্ন : আমার ইচ্ছা আলেম হওয়া। কিন্তু পিতা-মাতা আমাকে মাদরাসায় পড়াতে রাযী নন। এক্ষণে আমার করণীয় কি ?
-আফযাল শরীফ
উত্তর : এরূপ ইচ্ছা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কারণ যারা দ্বীনের জ্ঞানার্জন করে, তারা আল্লাহর নিকট উচ্চ মর্যাদা লাভ করে (মুজাদালাহ ৫৮/১১)। যে ব্যক্তি দ্বীনী ইলম শিক্ষা করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের রাস্তা সহজ করে দেন’ (বায়হাক্বী, মিশকাত হা/২৫৫, হাদীছ ছহীহ)। এক্ষণে আপনার পিতা-মাতাকে নিজে কিংবা কোন ভাল আলেমের মাধ্যমে বুঝানোর চেষ্টা করুন।
প্রশ্ন : আমাদের এলাকায় লাশ বহনের খাটে কালো কাপড় দেওয়া হয়, যাতে আয়াতুল কুরসী লেখা থাকে। এটা শরী‘আত সম্মত কি ?
-আব্দুর রশীদ, সাঘাটা
উত্তর : লাশের খাটে আয়াতুল কুরসী লিখলে এতে মৃতব্যক্তির কোন উপকারে আসার প্রশ্নই আসে না। এগুলি মনগড়া ও বিদ‘আতী প্রথা মাত্র। যা অবশ্য পরিত্যাজ্য।
প্রশ্ন : ঈমানের ছয়টি মৌলিক বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপনকারী মুসলিম কবরপূজা সহ বিভিন্ন প্রকার শিরকী কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়া ব্যক্তি তওবা না করে মৃত্যুবরণ করলে অমুসলিমদের মত চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামের অধিবাসী হবে কি ?
-উম্মে সুলতানা, ক্ষেতলাল।
উত্তর : কবরপূজা সহ শিরকে আকবর বা বড় শিরকে লিপ্ত ব্যক্তি তওবা না করে মৃত্যুবরণ করলে চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামী হবে। আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্যকে শরীক করে, আল্লাহ অবশ্যই তার উপরে জান্নাতকে হারাম করে দেন এবং তার ঠিকানা হ’ল জাহান্নাম। আর যালেমদের জন্য কোন সাহায্যকারী নেই’ (মায়েদাহ ৫/৭২)। তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে অন্যকে শরীক করে। এতদ্ব্যতীত তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করে থাকেন’ (নিসা ৪/৪৮, ১১৬)। তার ছালাত-ছিয়াম ইত্যাদি সকল আমল নিষ্ফল হয়ে যাবে। আল্লাহ বলেন, ‘যদি তুমি শিরক কর, তাহ’লে তোমার সকল আমল অবশ্যই বরবাদ হয়ে যাবে এবং তুমি অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (যুমার ৩৯/৬৫)।
এক্ষেত্রে অমুসলিমদের সাথে তাদের পার্থক্যকরণের কোন সুযোগ নেই। কারণ মক্কার কুরায়েশরা আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও অসীলা পূজার কারণে তাদের কোন আমলই গৃহীত হয়নি। তারা বলত আমরা মূর্তিকে এজন্য পূজা করি যে, তারা আমাদেরকে আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছে দিবে’ (যুমার ৩৯/৩)। তারা বলত যে, এগুলি আল্লাহর নিকটে আমাদের জন্য সুফারিশকারী’ (ইউনুস ১০/১৮)। যারা কবরপূজারী, তারা একই আক্বীদা পোষণ করে যে, মৃত পীর তাদের জন্য সুফারিশ করবে এবং তার অসীলায় তারা মুক্তি পাবে। তবে যদি মৃত্যুর পূর্বে কেউ শিরক থেকে তওবা করে সঠিক পথে ফিরে আসে, তাহ’লে সে অন্যান্য পাপের শাস্তি ভোগ করে রাসূল (ছাঃ)-এর শাফা‘আতের মাধ্যমে একসময় জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি লাভ করবে ইনশাআল্লাহ (বুখারী হা/৭৪১০; মুসলিম হা/১৯১)। আল্লাহ সর্বাধিক অবগত।
প্রশ্ন : তাবলীগের ভাইয়েরা তাদের চিল্লার দলীল হিসাবে একটি হাদীছ বলে থাকেন, যেখানে রাসূল (ছাঃ) বলেন, হিজরত দু’প্রকার বা-ত্তাহ ও বাদিয়াহ। তারা ২য় প্রকার হিজরত করার জন্য দেশের বাইরে যান ও ফিরে আসেন। এ হাদীছটির সত্যতা এবং সঠিক ব্যাখ্যা কি ?
-মুহাম্মাদ শোভন।
উত্তর : উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (ত্বাবারাণী কাবীর, সিলসিলা যঈফাহ হা/৬৯৪৮)। বিষয়টি এই যে, ওয়াছেলা বিন আসক্বা‘ (রাঃ) মদীনায় হিজরতে করে আসলে রাসূল (ছাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি বা-ত্তাহ অর্থাৎ এখানে স্থায়ীভাবে থাকার জন্য এসেছ? নাকি বাদিয়াহ অর্থাৎ পুনরায় তোমার দেশে ফিরে যাবে?...। বিষয়টির সাথে তাবলীগ জামা‘আতের বিদেশ সফরের কোনই সম্পর্ক নেই। এগুলি নিজেদের বিদ‘আতী রীতিগুলিকে গ্রহণযোগ্য প্রমাণ করার জন্য হাদীছের দোহাই দেওয়া মাত্র।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম সর্বাধিক দাওয়াতী সফর করেছেন। কিন্তু তারা ৩, ১০, ৪০, ১২০ ইত্যাদি কোন সীমা নির্ধারণ করেননি। এগুলি সবই তাবলীগী নেতাদের মনগড়া রীতি বৈ কিছুই নয়। উল্লেখ্য, এ জামা‘আতটির অধিকাংশ প্রচারণাই শিরক ও বিদ‘আতী কাহিনী ও জাল-যঈফ বর্ণনায় ভরা। তাদের মূল পাঠ্য বই ‘তাবলীগী নেছাব’ যার সুস্পষ্ট প্রমাণ। অতএব এসব থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক।
প্রশ্ন : জনৈকা মহিলার মাথায় জট আছে। তা কেটে ফেললে তার ক্ষতি হবে বলে ধারণা করা হয়। শরী‘আতের দৃষ্টিকোণ থেকে এতে ক্ষতির কোন আশংকা আছে কি ?
-কামাল হোসাইন।
উত্তর : ঐ মহিলার চুলের জট আগে কাটতে হবে এবং এর মাধ্যমে তার কুসংস্কারপূর্ণ আক্বীদার জট ছাড়াতে হবে। ‘জট কারু উপকার বা ক্ষতি করতে পারে না আল্লাহর হুকুম ব্যতীত’ এই আক্বীদা তার হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। অতঃপর তার চুলের যত্ন নিতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসা করাতে হবে। কেননা সাধারণতঃ চুলের অযত্নের কারণেই এরূপ অবস্থার সৃষ্টি হয়ে থাকে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, যার চুল আছে, সে যেন স্বীয় চুলকে সম্মান করে অর্থাৎ যত্ন নেয় (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৪৫০)।
প্রশ্ন : জনৈক হিন্দু ৫০ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেছে। এখন তাকে সুন্নাতে খাৎনা করতে হবে কি ?
-আলমগীর,
উত্তর : খাৎনা করা মুস্তাহাব। জনৈক ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে বলেন, তুমি কুফরীর চুল ফেলে দাও এবং খাৎনা কর (আবুদাঊদ হা/৩৫৬, সনদ হাসান, ইরওয়া হা/৭৯)। খাৎনা করা মানুষের ফিৎরাত বা স্বভাবজাত পাঁচটি বিষয়ের অন্যতম (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪৪২০ ‘পোষাক’ অধ্যায় ‘চুল অাঁচড়ানো’ অনুচ্ছেদ)। এটি ইসলাম ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য স্বরূপ। এর মধ্যে যে স্বাস্থ্যগত কল্যাণ নিহিত রয়েছে, সে বিষয়ে সকল স্বাস্থ্যবিজ্ঞানী একমত। ইবরাহীম (আঃ) ৮০ বছর বয়সে আল্লাহর হুকুমে খাৎনা করেছিলেন (বুখারী হা/৩৩৫৬)।
No comments:
Post a Comment