তাওহীদ শব্দটি (وحد)
ক্রিয়ামূল থেকে উৎপত্তি হয়েছে। এর আভিধানিক অর্থ কোন জিনিসকে একক হিসাবে
নির্ধারণ করা। ‘না’ বাচক ও ‘হ্যাঁ’ বাচক উক্তি ব্যতীত এটির বাস্তবায়ন
হওয়া সম্ভব নয়। অর্থাৎ একককৃত বস্ত ব্যতীত অন্য বস্ত হতে কোন বিধানকে
অস্বীকার করে একককৃত বস্তর জন্য তা সাব্যস্ত করা।
উদাহরণ স্বরূপ আমরা বলব,
“আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা’বূদ নেই” একথার সাক্ষ্য দেয়া ব্যতীত কোন ব্যক্তির
তাওহীদ পূর্ণ হবে না। যে ব্যক্তি এই সাক্ষ্য প্রদান করবে, সে আল্লাহ ছাড়া
অন্যান্য সকল বস্ত হতে উলুহিয়্যাতকে (ইবাদত) অস্বীকার করে শুধুমাত্র
আল্লাহর জন্য তা সাব্যস্ত করবে। কারণ শুধুমাত্র নাফী বা ‘না’ বাচক বাক্যের
মাধ্যমে কোন বস্তকে গুণাগুণ থেকে মুক্ত করা হয়।আর শুধুমাত্র ‘হ্যাঁ’ বাচক বাক্যের মাধ্যমে কোন বস্তর জন্য কোন বিধান সাব্যস্ত করলে সেই বিধানে অন্যের অংশ গ্রহণকে বাধা প্রদান করে না। যেমন উদাহরণ স্বরূপ যদি আপনি বলেন, ‘অমুক ব্যক্তি দাঁড়ানো’। এই বাক্যে আপনি তার জন্য দন্ডায়মান হওয়াকে সাব্যস্ত করলেন। তবে আপনি তাকে দন্ডায়মান গুণের মাধ্যমে একক হিসাবে সাব্যস্ত করলেন না। হতে পারে এই গুণের মাঝে অন্যরাও শরীক আছে। অর্থাৎ অমুক ব্যক্তির সাথে অন্যান্য ব্যক্তিগণও দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। আর যদি বল, “যায়েদ ব্যতীত আর কেউ দাঁড়ানো নেই” তবে আপনি দন্ডায়মান হওয়াকে শুধুমাত্র যায়েদের সাথে সীমিত করে দিলেন। এই বাক্যে আপনি দন্ডায়মানের মাধ্যমে যায়েদকে একক করে দিলেন এবং দাঁড়ানো গুণটিকে যায়েদ ব্যতীত অন্যের জন্য হওয়াকে অস্বীকার করলেন। এভাবেই তাওহীদের প্রকৃত রূপ বাস্তবায়ন হয়ে থাকে। অর্থাৎ নাফী (না বোধক) ও ইছবাত (হ্যাঁ বোধক) বাক্যের সমন্বয় ব্যতীত তাওহীদ কখনো প্রকৃত তাওহীদ হিসাবে গণ্য হবে না। মুসলিম বিদ্বানগণ তাওহীদকে তিনভাগে বিভক্ত করেছেন।
১) তাওহীদুর্ রুবূবীয়্যাহ
২) তাওহীদুল উলুহীয়্যাহ
৩) তাওহীদুল আসমা অস্ সিফাত
কুরআন ও হাদীছ গভীরভাবে গবেষণা করে আলেমগণ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, তাওহীদ উপরোক্ত তিন প্রকারের মাঝে সীমিত।
প্রথমতঃ তাওহীদে রুবূবীয়্যার বিস্তারিত পরিচয়ঃ
সৃষ্টি, রাজত্ব, কর্তৃত্ব ও পরিচালনায় আল্লাহকে এক হিসাবে বিশ্বাস করার নাম তাওহীদে রুবূবীয়্যাহ্।
১- সৃষ্টিতে আল্লাহর একত্বঃ আল্লাহ একাই সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা। তিনি ছাড়া অন্য কোন সৃষ্টিকর্তা নেই। আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
) هَلْ مِنْ خَالِقٍ غَيْرُ اللَّهِ يَرْزُقُكُمْ مِنَ السَّمَاءِ وَالاَرْضِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ (
“আল্লাহ ছাড়া কোন স্রষ্টা আছে কি? যে তোমাদেরকে আকাশ ও জমিন হতে জীবিকা
প্রদান করে। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা’বূদ নেই।” (সূরা ফাতিরঃ
৩) কাফিরদের অন্তসার শুন্য মা’বূদদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে আল্লাহ বলেন,
)أَفَمَنْ يَخْلُقُ كَمَنْ لاَ يَخْلُقُ أَفَلاَ تَذَكَّرُوْنَ(
“সুতরাং যিনি সৃষ্টি করেন, তিনি কি তারই মত, যে সৃষ্টি করে না? তবুও কি
তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করবে না?” (সূরা নাহলঃ ১৭) সুতরাং আল্লাহ তাআ’লাই
একমাত্র সৃষ্টিকর্তা। তিনি সকল বস্ত সৃষ্টি করেছেন এবং সুবিন্যস্ত করেছেন।
আল্লাহ তাআ’লার কর্ম এবং মাখলুকাতের কর্ম সবই আল্লাহর সৃষ্টির অন্তর্ভুক্ত।
তাই আল্লাহ তাআ’লা মানুষের কর্মসমূহও সৃষ্টি করেছেন্ত একথার উপর ঈমান
আনলেই তাকদীরের উপর ঈমান আনা পূর্ণতা লাভ করবে। যেমন আল্লাহ বলেছেন,
)وَ اللَّهُ خَلَقَكُمْ وَمَا تَعْمَلُوْنَ(
“আল্লাহ তোমাদেরকে এবং তোমাদের কর্মসমূহকেও সৃষ্টি করেছেন।” (সূরা
আস্তসাফ্ফাতঃ ৯৬) মানুষের কাজসমূহ মানুষের গুণের অন্তর্ভুক্ত। আর মানুষ
আল্লাহর সৃষ্টি। কোন জিনিষের স্রষ্টা উক্ত জিনিষের গুণাবলীরও স্রষ্টা।
যদি বলা হয় আল্লাহ ছাড়া অন্যের ক্ষেত্রেও তো সৃষ্টি কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেছেন,
)تَبَارَكَ اللَّهُ اَحْسَنُ الْخَالِقِيْنَ (
“আল্লাহ সৃষ্টিকর্তাদের মধ্যে উত্তম সৃষ্টিকর্তা।” (সূরা মুমিনূনঃ ১৪)
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কিয়ামতের দিন ছবি
অংকনকারীদেরকে বলা হবে, তোমরা দুনিয়াতে যা সৃষ্টি করেছিলে, তাতে রূহের
সঞ্চার কর। উপরোক্ত প্রশ্নের উত্তর এই যে, আল্লাহর মত করে কোন মানুষ কিছু
সৃষ্টি করতে অক্ষম। মানুষের পক্ষে কোন অসি-ত্বহীনকে অসি-ত্ব দেয়া সম্ভব নয়।
কোন মৃত প্রাণীকেও জীবন দান করা সম্ভব নয়। আল্লাহ ছাড়া অন্যের তৈরী করার
অর্থ হল নিছক পরিবর্তন করা এবং এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় রূপান্তরিত করা
মাত্র। মূলতঃ তা আল্লাহরই সৃষ্টি। ফটোগ্রাফার যখন কোন বস্তর ছবি তুলে, তখন
সে উহাকে সৃষ্টি করে না। বরং বস্তটিকে এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায়
পরিবর্তন করে মাত্র। যেমন মানুষ মাটি দিয়ে পাখির আকৃতি তৈরী করে এবং
অন্যান্য জীব-জন্তু বানায়। সাদা কাগজকে রঙ্গীন কাগজে পরিণত করে। এখানে মূল
বস্ত তথা কালি, রং ও সাদা কাগজ সবই তো আল্লাহর সৃষ্টি। এখানেই আল্লাহর
সৃষ্টি এবং মানুষের সৃষ্টির মধ্যে পার্থক্য সুস্পষ্ট হয়ে উঠে।
২- রাজত্বে আল্লাহর একত্বঃ
মহান রাজাধিরাজ একমাত্র আল্লাহ তাআ’লা। তিনি বলেনঃ
)تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ(
“সেই মহান সত্বা অতীব বরকতময়, যার হাতে রয়েছে সকল রাজত্ব। আর তিনি প্রতিটি বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান।” (সূরা মুলকঃ ১) আল্লাহ আরো বলেন,
)قُلْ مَنْ بِيَدِهِ مَلَكُوتُ كُلِّ شَيْءٍ وَهُوَ يُجِيرُ وَلَا يُجَارُ عَلَيْهِ(
“হে নবী! আপনি জিজ্ঞাসা করুন, সব কিছুর কর্তৃত্ব কার হাতে? যিনি আশ্রয়
দান করেন এবং যার উপর কোন আশ্রয় দাতা নেই।” (সূরা মুমিনূনঃ ৮৮) সুতরাং সর্ব
সাধারণের বাদশাহ একমাত্র আল্লাহ তাআ’লা। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে বাদশাহ
বলা হলে তা সীমিত অর্থে বুঝতে হবে। আল্লাহ তাআ’লা অন্যের জন্যেও রাজত্ব ও
কর্তৃত্ব সাব্যস্ত করেছেন। তবে তা সীমিত অর্থে। যেমন তিনি বলেন,
)أَوْ مَا مَلَكْتُمْ مَفَاتِحَهُ(
“অথবা তোমরা যার চাবি-কাঠির (নিয়ন্ত্রনের) মালিক হয়েছো।” (সূরা নূরঃ ৬১)
আল্লাহ আরো বলেনঃ
)إِلا عَلَى أَزْوَاجِهِمْ أوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ(
“তবে তোমাদের স্ত্রীগণ অথবা তোমাদের আয়ত্বধীন দাসীগণ ব্যতীত।” (সূরা
মুমিনূনঃ ৬) আরো অনেক দলীলের মাধ্যমে জানা যায় যে, আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরও
রাজত্ব রয়েছে। তবে এই রাজত্ব আল্লাহর রাজত্বের মত নয়। সেটা অসম্পূর্ণ
রাজত্ব। তা ব্যাপক রাজত্ব নয়। বরং তা একটা নির্দিষ্ট সীমা রেখার ভিতরে। তাই
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে, যায়েদের বাড়ীতে রয়েছে একমাত্র যায়েদেরই
কর্তৃত্ব ও রাজত্ব। তাতে আমরের হস্তক্ষেপ করার কোন ক্ষমতা নেই এবং বিপরীত
পক্ষে আমরের বাড়ীতে যায়েদও কোন হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তারপরও মানুষ আপন
মালিকানাধীন বস্তর উপর আল্লাহ প্রদত্ত নির্ধারিত সীমা-রেখার ভিতরে থেকে
তাঁর আইন্তকানুন মেনেই রাজত্ব করে থাকে। এজন্যই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম) অকারণে সম্পদ বিনষ্ট করতে নিষেধ করেছেন। আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
)وَلَا تُؤْتُوا السُّفَهَاءَ أَمْوَالَكُمْ الَّتِي جَعَلَ اللَّهُ لَكُمْ قِيَامًا(
“যে সমস্ত ধন্তসম্পদ আল্লাহ তোমাদের জীবন ধারণের উপকরণ স্বরূপ দান
করেছেন, তা তোমরা নির্বোধ লোকদের হাতে তুলে দিওনা।” (সূরা নিসাঃ ৫) মানুষের
রাজত্ব ও মুলূকিয়ত খুবই সীমিত। আর আল্লাহর মালিকান ও রাজত্ব সর্বব্যাপী
এবং সকল বস্তকে বেষ্টনকারী। তিনি তাঁর রাজত্বে যা ইচ্ছা, তাই করেন। তাঁর
কর্মের কৈফিয়ত তলব করার মত কেউ নেই। অথচ সকল মানুষ তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে
জিজ্ঞাসিত হবে।
৩- পরিচালনায় আল্লাহর একত্বঃ
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এক ও অদ্বিতীয় ব্যবস্থাপক এবং পরিচালক। তিনি সকল
মাখলূকাত এবং আসমান্তযমিনের সব কিছু পরিচালনা করেন। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
)أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ تَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ(
“সৃষ্টি করা ও আদেশ দানের মালিক একমাত্র তিনি। বিশ্ব জগতের প্রতিপালক
আল্লাহ তা’আলা অতীব বরকতময়।” (সূরা আ’রাফঃ ৫৪) আল্লাহর এই পরিচালনা
সর্বব্যাপী। কোন শক্তিই আল্লাহর পরিচালনাকে রুখে দাঁড়তে পারে না। কোন কোন
মাখলূকের জন্যও কিছু কিছু পরিচালনার অধিকার থাকে। যেমন মানুষ তার
ধন্তসম্পদ, সন্তান্তসন্ততি এবং কর্মচারীদের উপর কর্তৃত্ব করে থাকে। কিন্তু এ
কর্তৃত্ব নির্দিষ্ট একটি সীমার ভিতরে। উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমাদের
বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণিত হল যে, তাওহীদে রুবূবীয়্যাতের অর্থ সৃষ্টি,
রাজত্ব এবং পরিচালনায় আল্লাহকে একক হিসাবে বিশ্বাস করা।
দ্বিতীয়তঃ তাওহীদুল উলুহীয়্যাহ্ঃ
এককভাবে আল্লাহর এবাদত করার নাম তাওহীদে উলুহীয়্যাহ। মানুষ যেভাবে
আল্লাহর এবাদত করে এবং নৈকট্য হাসিলের চেষ্টা করে, অনুরূপ অন্য কাউকে
এবাদতের জন্য গ্রহণ না করা। তাওহীদে উলুহীয়্যাতের ভিতরেই ছিল আরবের
মুশরিকদের গোমরাহী। এ তাওহীদে উলূহিয়াকে ক্রেন্দ্র করেই তাদের সাথে জিহাদ
করে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের জান্তমাল,
ঘরবাড়ী ও জমি-জায়গা হরণ হালাল মনে করেছিলেন। তাদের নারী-শিশুদেরকে
দাস্তদাসীতে পরিণত করেছিলেন। এই প্রকার তাওহীদ দিয়েই আল্লাহ তাআ’লা
রাসূলগণকে প্রেরণ করেছিলেন এবং সমস্ত আসমানী কিতাব নাযিল করেছেন। যদিও
তাওহীদে রুবূবীয়্যাত এবং তাওহীদে আসমা ওয়াস্ সিফাতও নবীদের দাওয়াতের
বিষয়বস্ত ছিল, কিন্তু অধিকাংশ সময়ই নবীগণ তাদের স্বজাতীয় লোকদেরকে তাওহীদে
উলুহীয়্যার প্রতি আহবান জানাতেন। মানুষ যাতে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও জন্য
এবাদতের কোন অংশই পেশ না করে, সদাসর্বদা রাসূলগণ তাদের উম্মতদেরকে এই আদেশই
দিতেন। চাই সে হোক নৈকট্যশীল ফেরেশতা, আল্লাহর প্রেরিত নবী, আল্লাহর
সৎকর্মপরায়ণ অলী বা অন্য কোন মাখলুক। কেননা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও এবাদত
করা বৈধ নয়। যে ব্যক্তি এই প্রকার তাওহীদে ত্রুটি করবে, সে কাফির মুশরিক।
যদিও সে তাওহীদে রুবূবীয়াহ এবং তাওহীদে আসমা ওয়াস্ সিফাতের স্বীকৃতী
প্রদান করে থাকে। সুতরাং কোন মানুষ যদি এ বিশ্বাস করে যে, আল্লাহই একমাত্র
সৃষ্টিকারী, একমাত্র মালিক এবং সব কিছুর পরিচালক, কিন্তু আল্লাহর এবাদতে
যদি অন্য কাউকে শরীক করে, তবে তার এই স্বীকৃতী ও বিশ্বাস কোন কাজে আসবে না।
যদি ধরে নেয়া হয় যে, একজন মানুষ তাওহীদে রুবূবীয়াতে এবং তাওহীদে আসমা
ওয়াস্ সিফাতে পূর্ণ বিশ্বাস করে, কিন্তু সে কবরের কাছে যায় এবং কবরবাসীর
এবাদত করে কিংবা তার জন্য কুরবানী পেশ করে বা পশু জবেহ করে তাহলে সে কাফির
এবং মুশরিক। মৃত্যুর পর সে হবে চিরস্থায়ী জাহান্নামী। আল্লাহ তাআ’লা বলেন,
)إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ(
“নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি শির্কে লিপ্ত হবে, আল্লাহ তার উপর জান্নাত হারাম
করে দিয়েছেন। তার ঠিকানা জাহান্নাম। আর জালেমদের জন্য কোন সাহায্যকারী
নেই।” (সূরা মায়িদাঃ ৭২) কুরআনের প্রতিটি পাঠকই একথা অবগত আছে যে, নবী
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে সমস্ত কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করেছেন,
তাদের জান্তমাল হালাল মনে করেছেন এবং তাদের নারী-শিশুকে বন্দী করেছেন ও
তাদের দেশকে গণীমত হিসাবে দখল করেছেন, তারা সবাই একথা স্বীকার করত যে,
আল্লাহই একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ও প্রতিপালক। তারা এতে কোন সন্দেহ পোষণ করত
না। কিন্তু যেহেতু তারা আল্লাহর সাথে অন্যেরও উপাসনা করত, তাই তারা মুশরিক
হিসাবে গণ্য হয়েছে এবং তাদের জান্তমাল হরণ হালাল বিবেচিত হয়েছে।
তৃতীয়তঃ তাওহীদুল্ আসমা ওয়াস্ সিফাতঃ
তাওহীদুল্ আসমা ওয়াস্ সিফাতের অর্থ হল, আল্লাহ নিজেকে যে সমস্ত নামে
নামকরণ করেছেন এবং তাঁর কিতাবে নিজেকে যে সমস্ত গুণে গুণাম্বিত করেছেন সে
সমস্ত নাম ও গুণাবলীতে আল্লাহকে একক ও অদ্বিতীয় হিসাবে মেনে নেওয়া। আল্লাহ
নিজের জন্য যা সাব্যস্ত করেছেন, তাতে কোন পরিবর্তন, পরিবর্ধন, তার ধরণ
বর্ণনা এবং কোন রূপ উদাহরণ পেশ করা ব্যতীত আল্লাহর জন্য তা সাব্যস্ত করার
মাধ্যমেই এ তাওহীদ বাস্তবায়ন হতে পারে। সুতরাং আল্লাহ নিজেকে যে নামে পরিচয়
দিয়েছেন বা নিজেকে যে গুণাবলীতে গুণান্বিত করেছেন, তাঁর উপর ঈমান আনয়ন করা
আবশ্যক। এ সমস্ত নাম ও গুণাবলীর আসল অর্থ আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করে তার
উপর ঈমান আনতে হবে- কোন প্রকার ধরণ বর্ণনা করা বা দৃষ্টান্ত পেশ করা
যাবেনা। এই প্রকারের তাওহীদে আহলে কিবলা তথা মুসলমানদের বিরাট একটি অংশ
গোমরাহীতে পতিত হয়েছে। এক শ্রেণীর লোক আল্লাহর সিফাতকে অস্বীকারের ক্ষেত্রে
এতই বাড়াবাড়ি করেছে যে, এর কারণে তারা ইসলাম থেকে বের হয়ে গেছে। আর এক
শ্রেণীর লোক মধ্যম পন'া অবলম্বন করেছে। আর এক শ্রেণীর লোক আহলে সুন্নাহ
ওয়াল জামাতের কাছাকাছি। কিন্তু সালাফে সালেহীনের মানহাজ হল, আল্লাহ নিজের
জন্য যে নাম নির্ধারণ করেছেন এবং নিজেকে যে সবগুণে গুণাম্বিত করেছেন, সে সব
নাম ও গুণাবলীরর উপর ঈমান আনয়ন করতে হবে।
আল্লাহর কতিপয় নামের দৃষ্টান্তঃ
১) الحي القيوم) আল্লাহ
তাআ’লার অন্যতম নাম হচ্ছে, “আল হাইয়্যুল্ কাইয়্যুম” এই নামের উপর ঈমান
রাখা আমাদের উপর ওয়াজিব। এই নামটি আল্লাহর একটি বিশেষ গুণেরও প্রমাণ বহন
করে। তা হচ্ছে, আল্লাহর পরিপূর্ণ হায়াত। যা কোন সময় অবর্তমান ছিলনা এবং কোন
দিন শেষও হবে না। অর্থাৎ আল্লাহ তাআ’লা চিরঞ্জীব। তিনি সবসময় আছেন এবং
সমস্ত মাখলুকাত ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরও অবশিষ্ট থাকবেন। তাঁর কোন ধ্বংস বা
ক্ষয় নেই।
২) আল্লাহ নিজেকে السميع (আস্ সামীউ) শ্রবণকারী
নামে অভিহিত করেছেন। তার উপর ঈমান আনা আবশ্যক। শ্রবণ করা আল্লাহর একটি
গুণ। তিনি মাখলুকাতের সকল আওয়াজ শ্রবণ করেন। তা যতই গোপন ও অস্পষ্ট হোক না
কেন।
আল্লাহর কতিপয় সিফাতের দৃষ্টান্তঃ
আল্লাহ বলেনঃ
)وَقَالَتْ الْيَهُودُ يَدُ اللَّهِ مَغْلُولَةٌ غُلَّتْ أَيْدِيهِمْ وَلُعِنُوا بِمَا قَالُوا بَلْ يَدَاهُ مَبْسُوطَتَانِ يُنفِقُ كَيْفَ يَشَاءُ(
“ইয়াহুদীরা বলে আল্লাহর হাত বন্ধ হয়ে গেছে। বরং তাদের হাতই বন্ধ। তাদের
উক্তির দরুন তারা আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত হয়েছে, বরং আল্লাহর উভয় হাত সদা
উম্মুক্ত, যেরূপ ইচ্ছা ব্যয় করেন।” (সূরা মায়িদাঃ ৬৪) এখানে আল্লাহ তাআ’লা
নিজের জন্য দু’টি হাত সাব্যস্ত করেছেন। যা দানের জন্য সদা প্রসারিত। সুতরাং
আল্লাহর দু’টি হাত আছে। এর উপর ঈমান আনতে হবে। কিন্তু আমাদের উচিৎ আমরা
যেন অন্তরের মধ্যে আল্লাহর হাত কেমন হবে সে সম্পর্কে কোন কল্পনা না করি এবং
কথার মাধ্যমে যেন তার ধরণ বর্ণনা না করি ও মানুষের হাতের সাথে তুলনা না
করি। কেননা আল্লাহ বলেছেন,
)لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ(
“কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” (সূরা শুরাঃ ১১) আল্লাহ বলেন,
)قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّي الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَأَنْ تُشْرِكُوا بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا وَأَنْ تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ(
“হে মুহাম্মাদ! আপনি ঘোষণা করে দিন যে, আমার প্রতিপালক প্রকাশ্য ও
অপ্রকাশ্য অশ্লীলতা, পাপকাজ, অন্যায় ও অসংগত বিদ্রোহ ও বিরোধিতা এবং
আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করা, যার পক্ষে আল্লাহ কোন দলীল-প্রমাণ
অবতীর্ণ করেন নি, আর আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলা যে সম্বন্ধে তোমাদের কোন
জ্ঞান নেই, (ইত্যাদি কাজ ও বিষয় সমূহ) হারাম করেছেন।” (সূরা আরাফঃ ৩৩)
আল্লাহ আরো বলেন,
)وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُوْلَئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا(
“যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নাই, সেই বিষয়ে অনুমান দ্বারা পরিচালিত হয়ো
না, নিশ্চয়ই কর্ণ, চক্ষু, অন্তর ওদের প্রত্যেকের নিকট কৈফিয়ত তলব করা হবে।”
(সূরা বানী ইসরাঈলঃ ৩৬) সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর হাত দু’টিকে মানুষের
হাতের সাথে তুলনা করল, সে আল্লাহর বাণী “কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়” একথাকে
মিথ্যা প্রতিপন্ন করল এবং আল্লাহর বাণী,
)فَلَا تَضْرِبُوا لِلَّهِ الْأَمْثَالَ(
তোমরা আল্লাহর জন্য দৃষ্টান্ত পেশ করো না। (সূরা নাহলঃ ৭৪) এর
বিরুদ্ধাচরণ করল। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর গুণাবলীর নির্দিষ্ট কোন কাইফিয়ত
বর্ণনা করল, সে আল্লাহর ব্যাপারে বিনা ইলমে কথা বলল এবং এমন বিষয়ের অনুসরণ
করল, যে সম্পর্কে তার কোন জ্ঞান নেই।
আল্লাহর সিফাতের আরেকটি উদাহরণ পেশ করব। তা হল আল্লাহ আরশের উপরে
সমুন্নত হওয়া। কুরআনের সাতটি স্থানে আল্লাহ তাআ’লা উল্লেখ করেছেন যে তিনি
আরশের উপরে বিরাজমান। প্রত্যেক স্থানেই (استوى على العرش) “ইসতাওয়া আলাল আরশি” বাক্যটি ব্যবহার করেছেন। আমরা যদি আরবী ভাষায় ইসতিওয়া শব্দটি অনুসন্ধান করতে যাই তবে দেখতে পাই যে,(استوى) শব্দটি সব সময় (على) অব্যয়ের মাধ্যমে ব্যবহার হয়ে থাকে। আর (استوى) শব্দটি এভাবে ব্যবহার হলে ‘সমুন্নত হওয়া’ এবং ‘উপরে হওয়া’ ব্যতীত অন্য কোন অর্থে ব্যবহার হয় না। সুতরাং الرَّحْمَنُ عَلَىْ العَرْشِ اسْتَوَى
এবং এর মত অন্যান্য আয়াতের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ সৃষ্টি জগতের
উপরে সমুন্নত হওয়া ছাড়াও আরশের উপরে বিশেষ একভাবে সমুন্নত। প্রকৃতভাবেই
আল্লাহ আরশের উপরে। আল্লাহর জন্য যেমনভাবে সমুন্নত হওয়া প্রযোজ্য, তিনি
সেভাবেই আরশের উপরে সমুন্নত। আল্লাহর আরশের উপরে হওয়া এবং মানুষের খাট-পালং
ও নৌকায় আরোহনের সাথে কোন সামঞ্জস্যতা নেই। এমনিভাবে মানুষের যানবাহনের
উপরে চড়া এবং আল্লাহর আরশের উপরে হওয়ার মাঝে কোন সামঞ্জস্যতা নেই। আল্লাহ
তাআ’লা বলেন,
)وَجَعَلَ لَكُمْ مِنْ الْفُلْكِ وَالْأَنْعَامِ مَا تَرْكَبُونَ لِتَسْتَوُوا عَلَى ظُهُورِهِ ثُمَّ تَذْكُرُوا نِعْمَةَ رَبِّكُمْ إِذَا اسْتَوَيْتُمْ عَلَيْهِ وَتَقُولُوا سُبْحانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ وَإِنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنقَلِبُونَ(
“তিনি তোমাদের আরোহনের জন্য সৃষ্টি করেন নৌযান ও চতুষ্পদ জন্তু যাতে
তোমরা তার উপর আরোহণ করতে পার, তারপর তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ স্মরণ কর
যখন তোমরা ওর উপর স্থির হয়ে বস এবং বলঃ পবিত্র ও মহান তিনি, যিনি এদেরকে
আমাদের জন্য বশীভূত করেছেন, যদিও আমরা সমর্থ ছিলাম না এদেরকে বশীভূত করতে।
আর আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তন করবো।” (সূরা যুখরুফঃ ১২-১৪)
সুতরাং মানুষের কোন জিনিষের উপরে উঠা কোন ক্রমেই আল্লাহর আরশের উপরে হওয়ার
সদৃশ হতে পারে না। কেননা আল্লাহর মত কোন কিছু নেই।
যে ব্যক্তি বলে যে, আরশের উপরে আল্লাহর সমুন্নত হওয়ার অর্থ আরশের
অধিকারী হয়ে যাওয়া, সে প্রকাশ্য ভুলের মাঝে রয়েছে। কেননা এটা আল্লাহর
কালামকে আপন স্থান থেকে পরির্বতন করার শামিল এবং ছাহাবী এবং তাবেয়ীদের
ইজমার সম্পূর্ণ বিরোধী। এ ধরণের কথা এমন কিছু বাতিল বিষয়কে আবশ্যক করে, যা
কোন মুমিনের মুখ থেকে উচ্চারিত হওয়া সংগত নয়। কুরআন মাজীদ আরবী ভাষায়
অবতীর্ণ হয়েছে। আল্লাহ বলেন,
)إِنَّا جَعَلْنَاهُ قُرْآنًا عَرَبِيًّا لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ(
“আমি এই কুরআনকে আরবী ভাষায় অবতীর্ণ করেছি যাতে তোমরা বুঝতে পার।” (সূরা
যুখরুফঃ ৩) আরবী ভাষায় ইসতাওয়া শব্দের অর্থ ‘সমুন্নত হওয়া’ এবং ‘স্থির
হওয়া’। আর এটাই হল ইসতিওয়া শব্দের আসল অর্থ। সুতরাং আল্লাহর বড়ত্বের শানে
আরশের উপর যেভাবে বিরাজমান হওয়া প্রযোজ্য, সেভাবেই তিনি বিরাজমান। যদি
ইসতিওয়ার (সমুন্নত হওয়ার) অর্থ ইসতিওলা (অধিকারী) হওয়ার মাধ্যমে করা হয়,
তবে তা হবে আল্লাহর কালামকে পরিবর্তন করার শামিল। আর যে ব্যক্তি এরূপ করল,
সে কুরআনের ভাষা যে অর্থের উপর প্রমাণ বহণ করে, তা অস্বীকার করল এবং অন্য
একটি বাতিল অর্থ সাব্যস্ত করল।
তাছাড়া “ইসতিওয়া” এর যে অর্থ আমরা বর্ণনা করলাম, তার উপর সালাফে
সালেহীন ঐকমত্য (ইজমা) পোষণ করেছেন। কারণ উক্ত অর্থের বিপরীত অর্থ তাদের
থেকে বর্ণিত হয়নি। কুরআন এবং সুন্নাতে যদি এমন কোন শব্দ আসে সালাফে সালেহীন
থেকে যার প্রকাশ্য অর্থ বিরোধী কোন ব্যাখ্যা না পাওয়া যায়, তবে সে
ক্ষেত্রে মূলনীতি হল উক্ত শব্দকে তার প্রকাশ্য অর্থের উপর অবশিষ্ট রাখতে
হবে এবং তার মর্মার্থের উপর ঈমান রাখতে হবে।
যদি প্রশ্ন করা হয় যে, সালাফে সালেহীন থেকে কি এমন কোন কথা বর্ণিত হয়েছে
যা প্রমাণ করে যে, “ইসতাওয়া” অর্থ “আলা” (আরশের উপরে সমুন্নত হয়েছেন)?
উত্তরে আমরা বলব হ্যাঁ, অবশ্যই তা বর্ণিত হয়েছে। যদি একথা ধরে নেয়া হয় যে,
তাঁদের থেকে এর প্রকাশ্য তাফসীর বর্ণিত হয়নি, তবেও এ সমস্ত ক্ষেত্রে সালাফে
সালেহীনের মানহাজ (নীতি) হল, কুরআন এবং সুন্নাহর শব্দ যে অর্থ নির্দেশ
করবে, আরবী ভাষার দাবী অনুযায়ী শব্দের সে অর্থই গ্রহণ করতে হবে।
ইসতিওয়ার অর্থ ইসতিওলা দ্বারা করা হলে যে সমস্ত সমস্যা দেখা দেয়ঃ
১) ইসতিওলা অর্থ কোন বস্তর মালিকানা হাসিল করা বা কোন যমিনের উপর
কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। তাই ইসতিওয়ার অর্থ ইসতিওলার মাধ্যমে করা হলে অর্থ
দাঁড়ায়, আকাশ-জমিন সৃষ্টির আগে আল্লাহ আরশের মালিক ছিলেন না, পরে মালিক
হয়েছেন। আল্লাহ তাআ’লা বলেন,
)إِنَّ رَبَّكُمْ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ(
“নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক হলেন সেই আল্লাহ যিনি ছয় দিনে আকাশ এবং জমিন
সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশের উপরে সমুন্নত হলেন।” (সূরা আরাফঃ ৫৪)
২) “আর্-রাহমানু আ’লাল আরশিস্ তাওয়া” অর্থ যদি ইস্তাওলার মাধ্যমে করা
শুদ্ধ হয় তাহলে এ কথাও বলা শুদ্ধ হবে যে, আসমান্তযমিন সৃষ্টি করার পূর্বে
বা সৃষ্টি করা পর্যন্ত আরশ আল্লাহর কর্তৃত্বের মধ্যে ছিলনা। এমনিভাবে
অন্যান্য মাখলুকাতের ক্ষেত্রেও একই ধরণের কথা প্রযোজ্য। এ ধরণের অর্থ
আল্লাহর শানে শোভনীয় নয়।
৩) এটি আল্লাহর কালামকে তার আপন স্থান থেকে সরিয়ে দেয়ার শামিল।
৪) এ ধরণের অর্থ করা সালাফে সালেহীনের ইজমার পরিপন্থী।
তাওহীদুল আসমা ওয়াস্ সিফাতের ক্ষেত্রে সার কথা এই যে, আল্লাহ নিজের
জন্য যে সমস্ত নাম ও গুণাবলী সাব্যস্ত করেছেন, কোন পরিবর্তন, বাতিল বা
ধরণ-গঠন কিংবা দৃষ্টান্ত পেশ করা ছাড়াই তার প্রকৃত অর্থের উপর ঈমান আনয়ন
করা আমাদের উপর ওয়াজিব।
No comments:
Post a Comment