Pages

প্রশ্নঃ কি কি কারণে নামায বাতিল হয়ে যায়?


উত্তরঃ এমন বহু কর্ম আছে, যা নামাযের ভিতরে করলে নামায বাতিল হয়ে যায়। সে সব কর্মের কিছু নিম্নরুপ:-

১। অপ্রয়োজনে নামাযের ভিতর এত বেশী নড়া-সরা বা চলা-ফেরা করা যাতে অন্য কেউ দেখলে এই মনে করে যে, সে নামায পড়ে নি। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৩/৩৫২-৩৫৩)

২। নামাযের কোন রুক্‌ন বা শর্ত ত্যাগ করা:-
ধীর-স্থিরভাবে নামায না পড়ার কারণে মহানবী (সাঃ) নামায ভুলকারী সাহাবাকে তিন-তিনবার ফিরিয়ে নামায পড়তে আদেশ করেছিলেন। (বুখারী, মুসলিম, প্রমুখ, মিশকাত ৭৯০ নং) কারণ, ধীর-স্থির ও শান্তভাবে নামায পড়া নামাযের এক রুক্‌ন ও ফরয। যা ত্যাগ করার পর সহু সিজদাহ করলেও সংশোধন হয় না।
অনুরুপ সূরা ফাতিহা, রুকূ, কোন সিজদাহ, সালাম বা অন্য কোন রুক্‌ন ত্যাগ করলে নামাযই হয় না।
নামায পড়তে পড়তে কারো ওযু ভেঙ্গে গেলে তার নামায বাতিল। নামায ত্যাগ করে পুনরায় ওযূ করে এসে নতুনভাবে নামায পড়তে হবে। (আবূদাঊদ, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক, মিশকাত ১০০৭ নং) অবশ্য ওযূ ভাঙ্গার নিছক সন্দেহের কারণে নামায বাতিল হয় না।

নামায পড়তে পড়তে শরমগাহ্‌ বের হয়ে পড়লে, মহিলাদের পেট, পিঠ, হাতের বাজু, চুল ইত্যাদি প্রকাশ হয়ে পড়লে (তা কোন বেগানা পুরুষ দেখতেপাক অথবা না পাক) নামায বাতিল হয়ে যায়।

কারো নামায পড়ার পর যদি মনে পড়ে যে সে বিনা ওযূতে নামায পড়েছে, অথবা কাপড়ে (নিজের) বীর্য (স্বপ্নদোষ) বা (মহিলা) মাসিকের চিহ্ন দেখে, তাহলে নামায শুদ্ধ হয় নি। যথা নিয়মে পবিত্র হওয়ার পর সে নামায পুনরায় পড়তে হবে। কারণ, দেহ্‌ নাপাক রেখে নামাযই হয় না।

পক্ষান্তরে নামায পড়ার পর যদি দেখে, কাপড়ে প্রস্রাব, পায়খানা বা অন্য কোন নাপাকী লেগে আছে; অর্থাৎ সে তা নিয়েই নামায পড়েছে, তাহলে না জানার কারণে তার নামায শুদ্ধ হয়ে যাবে। আর ফিরিয়ে পড়তে হবে না। কারণ, বাইরের কাপড়ে (অনুরুপ কোন অঙ্গে) নাপাকী লেগে থাকলেও তার দেহ্‌ আসলে পাক ছিল। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/১৯৮, ২৯৮)

৩। জেনেশুনে ইচ্ছাকৃত কথা বলা:-
আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) বলেন, নবী (সাঃ) এর নামায পড়া অবস্থায় আমরা তাঁকে সালাম দিতাম এবং তিনি সালামের উত্তরও দিতেন। অতঃপর যখন নাজাশীর নিকট থেকে ফিরে এলাম, তখন সালাম দিলে তিনি উত্তর দিলেন না। পরে কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, “নামাযে মগ্নতা আছে।” (বুখারী ১১৯৯ নং, মুসলিম, সহীহ প্রমুখ)
অবশ্য নামাযে কথা বলা হারাম তা না জেনে যদি কেউ কথা বলেই ফেলে, তাহলে তার নামায বাতিল নয়।

৪। পানাহার করা:-নামায পড়তে পড়তে খেলে অথবা পান করলে নামায বাতিল হয়ে যায়। মুখের ভিতর পান, গালি (?), চুইংগাম প্রভৃতি রেখে নামায হয় না। কারণ এ কাজ নামাযের পরিপন্থী। (ফিকহুস সুন্নাহ্‌ ১/২৪০, ফিকহুস সুন্নাহ্‌ উর্দু ১৩০ পৃ:)

৫। হাসা:-হাসলেও অনুরুপ কারণে নামায বাতিল পরিগণিত হয়। (ফিকহুস সুন্নাহ্‌ ১/২৪০, ফিকহুস সুন্নাহ্‌ উর্দু ১৩০পৃ:) অবশ্য কোন হাস্যকর জিনিস দেখে অথবা হাস্যকর কথা শুনে হাসি চেপে রাখতে না পেরে যদি কেউ মুচকি হাসি (শব্দ না করে) হেসে ফেলে, তাহলে তার নামায বাতিল হবে না।
৬। পিতার হারাম উপায়ে উপর্জিত অর্থ খেলে ও ব্যয় করলে পুত্রের নামায বাতিল নয়। তবে সেই অর্থ ব্যবহার না করতে যথাসাধ্য প্রয়াস থাকতে হবে।

৭। গাঁটের নিচে কাপড় ঝুলিয়ে নামায পড়লে ওযূ ও নামায কিছুই বাতিল হয় না। অবশ্য এমন কাজ করলে তার উপর থেকে মহান আল্লাহর সুনজর ও দায়িত্ব উঠে যায়। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ্‌, সঊদী উলামা-কমিটি ১/৩০১)

৮। কোন কারণে ইমামের নামায বাতিল হলে পশ্চাতে মুক্তাদীদের নামায বাতিল নয়। (আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ২/৩১৫-৩১৭) এ বিষয়ে ইমামতির বিবরণ দ্রষ্টব্য।

No comments:

Post a Comment